নাটোরের চলনবিলে চলছে মা মাছ নিধন

ডিমঅলা বিশাল আকৃতির একটি বোয়াল মাছ বাঁশের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঝোলানো। সেই বাঁশ কাঁধে নিয়ে সারা বাজারে ঘুরছেন মাছের দুই শিকারি। তাঁদের মুখে হাসি। তবে পেটে ডিমভর্তি বোয়াল মাছটি দেখে দর্শকের মুখে হাসি নেই। গত বৃহস্পতিবার সকালে এমন দৃশ্য দেখা গেছে নাটোরের সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া বাজারে।

এ সময় কথা হয় মাছের শিকারি হাবিল উদ্দিন ও রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁদের বাড়িও চলনবিলের ডাহিয়া গ্রামে। ওই দুজন বলেন, গত বুধবার রাতে উপজেলার বিলদহর এলাকায় চলনবিল থেকে তাঁরা মাছটি ধরেছেন। ওজন ১২ কেজি। দাম হেঁকেছেন ১০ হাজার টাকা। আট হাজার টাকা হলে বিক্রি করবেন। নইলে শহরে নিয়ে যাবেন। শেষ পর্যন্ত ওই বাজারের কেউ মাছটি কিনেছেন কি না, তা জানা যায়নি।

ডিমঅলা মাছ ধরা প্রচলিত আইনে নিষেধ থাকলেও তিনি কেন মাছটি ধরলেন জানতে চাইলে হাবিল উদ্দিন বলেন, ‘মাছটি জালে আটকালে না ধরে কী করব? ধরা পড়ার পর তো আর ছেড়ে দেওয়া যায় না।’ তিনি আরও বলেন, এখন হরহামেশাই মা মাছ ধরা পড়ছে। বিক্রিও হচ্ছে। সমাজের ধনী শ্রেণির মানুষ বিশেষ করে সরকারের বড় চাকরিজীবী এসব মাছ কিনছেন। তবে বড় মাছ সব সময় পাওয়া যায় না। 

স্থানীয় কয়েকজন জানান, বন্যার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৎস্য ভান্ডারখ্যাত চলনবিলের বিভিন্ন জলাশয়, নদী-নালা ও খাল-বিলে ডিমঅলা মাছ ধরা হচ্ছে। জেলেদের পাশাপাশি অপেশাদার মাছের শিকারিরা নদী ও বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে, কোঁচ, বাদাই ও কারেন্ট জাল এবং বানার বাঁধ দিয়ে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ ধরনের মাছ ধরে স্থানীয় হাটবাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন। অথচ বাধা দেওয়ার কেউ নেই।

চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন মাছের প্রজননের সময়। তাই এখন এ ধরনের মাছ না ধরলে তা বিলের পানিতে ডিম ছাড়ত। এতে বিলে মিঠাপানির মাছ কয়েক শ গুণ বেড়ে যেত। এভাবে নির্বিচারে মা মাছ নিধনে দেশীয় প্রায় ৩৯ প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে এর সঙ্গে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। তাই তাদের প্রতিহত করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।