এরশাদের আসনে ভোটে যেতে জাপায় নজর বিএনপির?

বিএনপি ও জাতীয় পার্টি
বিএনপি ও জাতীয় পার্টি

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে তাঁর আসন রংপুর-৩ এখন শূন্য। জাতীয় পার্টির ঘাঁটি বলে বিবেচিত এ আসনে নির্বাচন করার কথা ভাবছে বিএনপি। দলটি প্রার্থী বাছাইয়ে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিবেচনা করতে পারে।

অবশ্য বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ভোটে যাওয়া ও প্রার্থী বাছাই, সবকিছুই নির্ভর করছে সরকারের অবস্থান ও জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির ভাঙাগড়ার দিকেই নজর থাকবে বিএনপির।

১৪ জুলাই এরশাদ মারা যাওয়ার পর তাঁর আসনটি শূন্য হয়। এ আসনে নির্বাচন করার বিষয়ে বিএনপির মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি বলেছিল এই সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। এবারের উপজেলা নির্বাচনেও তারা দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থী দেয়নি। তবে বগুড়া- ৬ আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছেড়ে দেওয়া আসনে বিএনপি অংশ নেয় এবং জিতে যায়। সামনের সিটি নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে দলটির অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সায় আছে।

রংপুরের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি কিছু হিসাব-নিকাশ করবে। দলের এক দায়িত্বশীল সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, রংপুরের আসনটির জন্য বিএনপি ক্ষমতাসীনদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করবে। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেবে নাকি জাতীয় পার্টির প্রার্থীকেই তারা সমর্থন দেবে- এ বিষয়টি মাথায় থাকবে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনো আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। যেহেতু বগুড়ায় আমরা ইলেকশন করেছি। সে ক্ষেত্রে এই আসনে ভোটে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আছে। সম্ভাবনাও বেশি।

রংপুরের এ আসনটিতে ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টিই জিতেছে। বিএনপি এটাও জানে এখানে জিততে হলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে এরশাদের শেষ সময় থেকে জাতীয় পার্টিতে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেতে থাকে। দলে রওশনপন্থী ও জি এম কাদেরপন্থী হিসেবে দুটি ভাগ রয়েছে। গত ১৮ জুলাই কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তখন বলা হয় এতে রওশন এরশাদের ‘আশীর্বাদ’ আছে। তবে আজ মঙ্গলবার রওশন এরশাদ, জি এম কাদেরের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বিবৃতি দেন। রওশনের বিবৃতিকে ‘বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য’ নয় বলে পাল্টা মন্তব্য করেন কাদের।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে সে সুযোগটা কাজে লাগাতে চায় তারা। রংপুরের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থী নির্বাচন করতে পারে কিনা, সে বিষয়ে নজর রাখবে বিএনপি। অর্থাৎ জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও সরকারের মনোভাবের ওপর তাদের প্রার্থী নির্বাচন নির্ভর করবে।

রংপুরের আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্য থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। দলের দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, সম্প্রতি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এখানে উত্তরাঞ্চলের নেতারা প্রাধান্য পাবেন। সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এবং রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু্। এ ছাড়া দলের বাইরে থেকে কাউকে প্রার্থী করার বিষয়টিও মাথায় রাখছে বিএনপি। অন্য কোনো দলের বিদ্রোহী নেতা বা রাজনীতির বাইরে থেকেও কাউকে বিবেচনায় রাখা হতে পারে।

তবে বিএনপির নেতারা জানান, এ উপনির্বাচন যদি ‘গতানুগতিক’ হয়, মহাজোট যদি একক প্রার্থী হয় তাহলে জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী রিটা রহমানকেই পুনরায় মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।