শিশুদের নিয়ে অসহায় মা-বাবা

দেড় বছর বয়সী শিশুটিকে গত রোববার রাজধানীর মহাখালী এলাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই দিন পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে শিশুটি মারা যায়। শিশুটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কষ্ট আমি কাউকে বোঝাতে পারব না। আপনারা ঢাকা শহরের হাসপাতাল আর ক্লিনিক ঘুরে দেখেন, দেখবেন অনেকেই আমার মতো কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরছে।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু জ্বরে শিশুটির মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছে। এই নিয়ে ওই হাসপাতালে ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বনশ্রীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত শনিবার ৩৪ দিনের একটি শিশু মারা গেছে। প্রথম আলোর অনুসন্ধান অনুযায়ী, এই দুই শিশু নিয়ে সারা দেশে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২৮। ঢাকার দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একটি আধা সরকারি হাসপাতালে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। একটি মৃত্যু হয়েছে যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। বাকি ২০টি মৃত্যু হয়েছে ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। মৃত ২৮ জনের মধ্যে ১১ জনের বয়স ১২ বছরের নিচে। অবশ্য সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫।

হবিগঞ্জের সিভিল সার্জনের মৃত্যুর ঘটনা এই হিসাবের বাইরে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সাব্রিনা ফ্লোরা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ওই সিভিল সার্জন কিছুটা অসুস্থ ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি ডেঙ্গু জ্বরের কোনো ধরনের পরীক্ষা করাননি। তাই মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গতকাল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪৭৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। আর এ মাসে গতকাল পর্যন্ত ৫ হাজার ৬৩৭ জন আক্রান্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) সূত্র জানিয়েছে, ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় অবহেলার তদন্তের জন্য একজন চিকিৎসক বাবা ১৮ জুলাই বিএমডিসিতে আবেদন করেছেন। ওই চিকিৎসকের সাত বছরের ছেলে রাজধানীর একটি বেসরকারি বড় হাসপাতালে ৫ জুলাই মারা যায়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএমডিসি ঘটনা তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।

কিন্তু আরেকটি শিশুর বাবা কার কাছে আবেদন করবেন, কার কাছে নালিশ জানাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। তাঁর ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০ বছরের মেয়ে এখন শ্যামলীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে।

শিশুটির বাবা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ জুলাই মেয়েটির জ্বর হয়। ২০ জুলাই রাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শিশুটিকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। রাত সাড়ে ১০টা থেকে শ্যামলী, মিরপুর, পান্থপথ, জিগাতলার মোট পাঁচটি হাসপাতালে শিশুটিকে নিয়ে ঘুরে ছিলেন। শিশুটির পরিস্থিতি খারাপ দেখে কোনো হাসপাতাল ভর্তি করেনি। রাত তিনটার পর এক আত্মীয়ের সহায়তায় বর্তমান হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করানোর সুযোগ পান তিনি।

মেয়েটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুদের কোথায় রাখব? স্কুলে না বাসায়? কোথায় মশা নেই?’