পৌরসভার সেবা কার্যক্রম স্থবির

ধর্মঘটের কারণে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মকারীরা এখন ঢাকায়। এতে নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে গেছে এলাকায়। ময়লা-আবর্জনা জমে গেছে। গতকাল বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার প্রধান সড়কে।  ছবি: প্রথম আলো
ধর্মঘটের কারণে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মকারীরা এখন ঢাকায়। এতে নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে গেছে এলাকায়। ময়লা-আবর্জনা জমে গেছে। গতকাল বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার প্রধান সড়কে। ছবি: প্রথম আলো

কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে পৌরসভাগুলোতে ১০ দিন ধরে দাপ্তরিক ও সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌর এলাকার বাসিন্দারা। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করায় শহরের অলিগলিতে জমেছে ময়লার স্তূপ। ঠিকমত জ্বলছে না সড়কবাতি। বন্ধ রয়েছে টিকাদান কর্মসূচি। কর সংগ্রহ, নাগরিক সনদ প্রদান, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ দৈনন্দিন পৌর সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।

রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পেনশনসহ বেতন-ভাতা দেওয়ার দাবিতে ১৪ জুলাই থেকে কাজ বন্ধ রেখে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন দেশের ৩২৮টি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁরা কেন্দ্রীয় আন্দোলনে অংশ নিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে পৌরসভার মূল ফটক।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দেখা যায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক শ পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী। ‘মাস শেষে বেতন নাই, এ কেমন চাকরি ভাই’, ‘দেখ কত জ্বালা, পৌরসভায় তালা’ নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। খণ্ড খণ্ড মিছিল হচ্ছে।

পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল আলীম মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁদের দাবির বিষয়ে সরকার আন্তরিক নয়। প্রতিদিন বিভিন্ন পৌরসভা থেকে আরও কর্মী ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম অবশ্য সম্প্রতি বলেছেন, এ নিয়ে আলাপ–আলোচনা হতে পারে। কিন্তু পৌরসভাগুলোকে নিজেদের আয়ে চলতে হবে।

যশোর অফিস জানায়,দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল। এখানকার পৌর এলাকায় ১০ দিন ধরে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে না। চারদিকে দুর্গন্ধময় পরিবেশ। রাতে সড়কে বাতি জ্বলে না। পানির লাইনে পানি সরবরাহ নেই। ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক, জন্ম-মৃত্যু—সব ধরনের সনদ ইস্যু করা বন্ধ রয়েছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, এ পৌরসভার ৪৩ জন স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী ঢাকায় আন্দোলন করছেন। আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ৫৩ জন অস্থায়ী পরিচ্ছন্নতাকর্মীও কাজ বন্ধ রাখেন। এতে বেনাপোল চেকপোস্ট (তল্লাশিচৌকি), কাগজপুকুর, বন্দরের কাঁচাবাজার,বন্দরের এক নম্বর ফটকের পাশসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ময়লার স্তূপ জমেছে। 

বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বুঝিয়ে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে।

প্রতিনিধি, পিরোজপুর জানান,পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, স্বরূপকাঠি ও ভান্ডারিয়া পৌরসভায় দাপ্তরিক ও সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পৌরসভা থেকে জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ট্রেড লাইন্সেস, ওয়ারিশ সনদ বিতরণসহ সব নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিকেরা। পৌরসভায় এসে সেবা না পেয়ে অনেককেই ফিরে যেতে হচ্ছে।

পৌরসভার কৃষ্ণনগর মহল্লার বাসিন্দা খাদিজা বেগম ঢাকা থাকেন। পৌরসভায় এসেছেন ভোটার তালিকায় নাম সংশোধনের জন্য নাগরিক সনদ নিতে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যান তিনি। খাদিজা বেগম বলেন, নাগরিক সনদের জন্য তাঁর কাজ আটকে আছে। কাজ শেষ করতে না পারায় ঢাকা যেতে পারছেন না।

প্রতিনিধি, বদরগঞ্জ, রংপুর জানান,রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা অসুস্থ টুলু শাহ্ জরুরি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন। এ কারণে দরকার জন্মনিবন্ধন সনদ। আট দিন ধরে তিনি পৌরসভায় যাচ্ছেন আর ফিরে আসছেন। কিন্তু জন্মনিবন্ধন পাননি। গতকাল মঙ্গলবার তিনি পৌর মেয়র উত্তম কুমার সাহার সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানান। কিন্তু মেয়রও সমাধান দিতে পারেননি।

পৌরসভার বালুয়াভাটা গ্রামের আনিছুল হক পাসপোর্ট করার আবেদনপত্রে মেয়রের প্রয়োজনীয় সই ও সিলমোহরের জন্য পৌরসভায় ঘুরছেন ৯ দিন ধরে। গতকালও এসেছিলেন কিন্তু পৌরসভায় তালা ঝুলতে দেখে ফিরে গেছেন।

পৌরসভার মেয়র উত্তম কুমার সাহা বলেন, পৌরসভায় ৫০ হাজার মানুষ বাস করেন। প্রতিদিন পৌরসভা কার্যালয়ে সরাসরি এসে গড়ে দুই শতাধিক মানুষ সেবা নেন। পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে থাকায় ১০ দিন ধরে মানুষকে সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

প্রতিনিধি, শেরপুর, বগুড়া জানান,গতকাল শেরপুর পৌর শহরে বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে দেখা গেছে, সব সড়কের অলিগলিতে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ হয়ে রয়েছে। শহরের নিচু সড়কগুলোতে পানিনিষ্কাশনের নালা উপচে সড়কের ওপর নোংরা পানি জমে রয়েছে। এ নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে শহরের সব মহল্লার বাসিন্দারা।

অবশ্য বিপরীত চিত্র দেখা গেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌরসভায়। প্রতিনিধি, শ্রীমঙ্গল জানান, গতকাল সকালে শ্রীমঙ্গল পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার কাজ স্বাভাবিকভাবে চলছে।

পৌরসভার প্যানেল মেয়র (২) মীর এম সালাম বলেন, যাঁরা ঢাকায় আন্দোলনে গেছেন, তাঁরা আন্দোলনে যাওয়ার সময় অন্যদের তাঁদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। ফলে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।