জামালপুরে বন্যায় ফসলের ক্ষতি, কৃষকদের সম্বল চাপা দীর্ঘশ্বাস

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বহু কৃষক। পূর্ব বলিয়াদহ, ইসলামপুর, জামালপুর, ২৪ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বহু কৃষক। পূর্ব বলিয়াদহ, ইসলামপুর, জামালপুর, ২৪ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

চার বিঘা জমিতে আমনের চারা লাগানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কৃষক মোহাম্মদ সেলিম। কিন্তু বন্যার পানিতে ভেসে গেছে সব বীজতলা। হাঁটুপানিতে নেমে অসহায়ের মতো বীজতলা হাতড়ালেও হতাশা ছাড়া কিছুই জোটেনি তাঁর কপালে।

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার অনেক কৃষকের অবস্থা এখন সেলিমের মতো। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বেশির ভাগের ফসল, শেষসম্বলটুকু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে।

বুধবার দুপুরে ইসলামপুরের বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে। কিছু জায়গায় মাঠ জেগে উঠলেও ধানের চারাসহ সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় মাঠে শুধু কাদামাটি। বেশির ভাগ কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাঁদের একমাত্র সম্বল এখন চাপা দীর্ঘশ্বাস।

বন্যার ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বুধবার দুপুরে কেঁদেই ফেললেন ইসলামপুরের আমতলী এলাকায় কৃষক আবদুল বাছেদ। কয়েকবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে অনেক কষ্টে ২০ হাজার টাকা খরচ করে দুই বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পানির তোড়ে সব পাট ভেসে গেছে। তিন বিঘা জমির জন্য আমনের বীজতলা তৈরি করেছিলেন। পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলোও। আবদুল বাছেদের মতো সুরেরপাড়া গ্রামের মো. আলমাছ উদ্দিন, আবদুল খালেক, তাহের আলী, শিংভাঙ্গা গ্রামের আবদুল করিম মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আমতলী এলাকার কাঞ্চন মিয়া, জাবেদ আলীসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের এখন একই অবস্থা।

বলিয়াদহ গ্রামের আবদুল মজিদের আমনের চারা ভেসে না গেলেও বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। আরেক খণ্ড জমিতে লালশাক চাষ করেছিলেন, সেগুলো কাদামাটির নিচে চাপা পড়েছে। পূর্ব বলিয়াদহ গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক আক্কাছ আলীর এক বিঘা জমির ফসল কাদায় সয়লাব হয়ে গেছে।

জামালপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এবারের বন্যায় ২ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমির রোপা আমনের বীজতলা, ৫ হাজার ৩০ হেক্টর জমির আউশ, ১২ হাজার ৯১২ হেক্টর জমির পাট, ৪ হাজার ৬৩১ হেক্টর জমির শাক-সবজি, ১৯০ হেক্টর জমির মরিচ, ১০৭ হেক্টর জমির কলা, ৮০ হেক্টর জমির আখ ও ৩৫ হেক্টর জমির ভুট্টা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জামালপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে কৃষক রক্ষা পেয়েছেন। কারণ বন্যার আগে আমন ধান মাঠে লাগানো হয়নি। যে বীজতলা লাগানো হয়েছিল, সেগুলো নষ্ট হয়েছে। তবে আমনের ফলনের জন্য এখনো পর্যাপ্ত সময় রয়েছে। আবার বীজতলা তৈরি করে আমন লাগানো যাবে। এখনো অনেক দুর্গত এলাকায় পানি রয়েছে। পুরো পানি ফসলের মাঠ থেকে নেমে গেলে টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।’

সরকারিভাবে বীজতলার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন মো. আমিনুল ইসলাম, ‘কৃষকদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। সরকারিভাবে বীজতলার ব্যবস্থা করা হবে। তবে এখন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন সম্ভব নয়। পুনর্বাসনের জন্য সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময় দিতে হবে।’