কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় মোড়ে মোড়ে ময়লার স্তূপ

নাগরিক সেবা বন্ধ। মোড়ে মোড়ে ময়লার স্তূপ। দুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। গতকাল কিশোরগঞ্জ শহরের ব্যস্ততম পুরান থানা এলাকায়।  প্রথম আলো
নাগরিক সেবা বন্ধ। মোড়ে মোড়ে ময়লার স্তূপ। দুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। গতকাল কিশোরগঞ্জ শহরের ব্যস্ততম পুরান থানা এলাকায়। প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় নাগরিক সেবা বন্ধ। শহরের মোড়ে মোড়ে ময়লার স্তূপ। পৌরসভার বাতি না জ্বলায় রাতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। পানির কষ্টেও আছেন বাসিন্দারা। এসব অসহনীয় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন তাঁরা।

গতকাল বুধবার দুপুরে শহরের গৌরাঙ্গবাজার এলাকায় এই কর্মসূচি পালন করে কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) জেলা শাখা। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে ও প্রতিবাদ সমাবেশে কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা ছাড়াও সাধারণ নাগরিকেরা অংশ নেন।

বক্তারা বলেন, সারা শহর ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধে পথচলা দায় হয়ে পড়েছে, ছড়াচ্ছে রোগজীবাণু। পানি সরবরাহ বন্ধ, রাতে সড়কবাতি না জ্বলায় ভৌতিক শহরে পরিণত হয়। অন্যদিকে পৌর কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় ট্যাক্স বৃদ্ধি করছে, অথচ নাগরিকদের দুর্ভোগ লাঘবে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে।

বক্তারা আরও বলেন, পৌরবাসীকে জিম্মি করে ও নাগরিক সেবা বন্ধ করে দিয়ে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন। কিন্তু নাগরিক সেবা বন্ধ করে আন্দোলন যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। এ অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পৌর মেয়রের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা।

জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হকের সভাপতিত্বে ও শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসান ইমামের পরিচালনায় কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন কৃষক সমিতির জেলা সভাপতি এনামুল হক ও ট্রেড ইউনিয়নের জেলা সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। এ ছাড়া কর্মসূচির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন জেলা বাসদের সমন্বয়ক শফীকুল ইসলাম।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভা সূত্র জানায়, সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতার দাবিতে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ১৪ জুলাই থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ও ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি চলছে। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় সব ধরনের সেবা বন্ধ রয়েছে।

দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে মানববন্ধন।  ছবি: প্রথম আলো
দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে মানববন্ধন। ছবি: প্রথম আলো

অভিযোগ উঠেছে, যাঁরা পৌরসভায় মাস্টাররোলে কাজ করেন, তাঁদেরও কাজ করতে দিচ্ছেন না কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ঢাকা থেকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, কাজ করলে চাকরি থাকবে না।

গত ১০ দিনের ময়লায় শহরের অলিগলি ও রাস্তাঘাট আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে উৎকট দুর্গন্ধ। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। বৃষ্টির পানির সঙ্গে আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ে।

গতকাল বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টিতে ময়লা আর কাদায় একাকার সর্বত্র। কাচারিবাজার, বড় বাজার, পুরান থানা বাজার, আলোরমেলা, নগুয়া, বত্রিশ, সুইপার কলোনি, হয়বতনগর, পুরোনো কোর্ট, হারুয়া, গাইটাল, নিউটাউন, নীলগঞ্জ রোড, গৌরাঙ্গ বাজার, খরমপট্টি, উকিলপাড়া, আখড়াবাজার, রথখলা এলাকাসহ সারা শহরে এ বেহাল অবস্থা। কয়েক দিনের জমে থাকা পচা আবর্জনা রাস্তার ওপর জমে থাকা পানিতে মিশে আছে।

পৌর বাসিন্দারা জানালেন, শহরে সড়কবাতি বন্ধ করে দেওয়ায় রাতে রাস্তাঘাটে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। চুরি-ছিনতাইয়ের আতঙ্কে রাতে চলাফেরা সীমিত করে দিয়েছেন শহরবাসী। তা ছাড়া কিছু এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় বাসিন্দাদের নিত্যদিনের গোসল ও কাপড়চোপড় ধোয়া নিয়েও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী এনায়েত করিম বলেন, পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবিদাওয়া থাকতে পারে। সেটা সরকারের কাছে। এ জন্য পৌরবাসীকে জিম্মি করে আন্দোলনের নামে যে নৈরাজ্য চলছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

কিশোরগঞ্জ পৌর কর্মকর্তা ও কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক জানান, কেন্দ্রীয় কমিটির ডাকে ১৪ জুলাই থেকে দেশের সব পৌর কর্মচারীরা জাতীয় প্রেসক্লাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তাঁদের ন্যায্য দাবিদাওয়া পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

এ ব্যাপারে পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, আন্দোলন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করছেন। মেয়র-কাউন্সিলররা এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নন। নাগরিকদের জিম্মি করা আন্দোলনে তাঁরা সমর্থন দিতে পারেন না। কারণ তাঁরা জনগণের প্রতিনিধি। তিনি গত সোমবার থেকে কিছু এলাকায় পানি সরবরাহ চালু করেছেন। তবে সব তো তাঁর একার পক্ষে সম্ভব নয়। যা হোক, তিনি আশা করছেন কেন্দ্রীয়ভাবে দ্রুত এ সমস্যার একটা সমাধান আসবে।