রাঙামাটিতে তিন মাসে ৫০৩ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত

রাঙামাটি
রাঙামাটি

রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়নে দুর্গম গ্রামগুলোতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। দুর্গম এসব গ্রামে গত প্রায় তিন মাসে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ৫০৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে দুর্গম গ্রামগুলোতে ম্যালেরিয়া এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ম্যালেরিয়া আক্রান্ত গ্রামে গিয়ে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে।

জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মে মাসের শুরুতে উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়নের দুর্গম চম্পাই, বগাখালী ও দুমদুম্যা গ্রামে ম্যালেরিয়া দেখা দেয়। খবর পেয়ে ব্র্যাক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একটি যৌথ চিকিৎসক দল সেখানে যায়। দলটি ওই তিন গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের ৯৩ জন ম্যালেরিয়া রোগীকে চিকিৎসা দেয়।

জুন মাসে এসে আবার ওই সব গ্রামসহ আশপাশে গ্রাম করল্যাছড়ি, আদিয়াবছড়া, কজতলী, গন্ডাছড়া ও মন্দিরাছড়ায় ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুটি চিকিৎসক দল ও ব্র্যাকের কয়েকটি চিকিৎসক দল সেখানে যায়। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত গ্রামগুলোতে নিয়মিত চিকিৎসা দিয়ে গেছে তারা। জুন মাসে ২০৪ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দুর্গম ওই সব গ্রামগুলোতে এখনো ম্যালেরিয়া রোগী রয়েছে। এ জন্য চলতি জুলাই মাসেও চিকিৎসক দল সেখানে চিকিৎসা দিচ্ছে। ২৪ জুলাই পর্যন্ত দুমদুম্যা ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামে ২০৬ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

স্থানীয় চম্পাই গ্রামে অলম মিত্র চাকমা বগাখালী গ্রামে বিনয় জ্যোতি চাকমা বলেন, ‘আমাদের গ্রামের অধিকাংশ জুমচাষি। জুম খেতে কাজ করতে গেলে মশা বেশি কামড়ায়। কাজে ঢুকে থাকায় অনেকে মশার কামড় টের পান না। যাঁরা অসুস্থ হচ্ছেন অধিকাংশ জুমচাষি। প্রায় প্রত্যেক পরিবারে ম্যালেরিয়া রোগী রয়েছে বলে তাঁরা জানান।’

দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শান্তি রাজ চাকমা বলেন, দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখানকার গ্রামবাসীরা তেমন সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। জুম খেত থেকে কাজ শেষে মশারি না টাঙিয়ে অধিকাংশ মানুষ ঘুমায়। সে জন্য ওই সব গ্রামে ম্যালেরিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ম্যালেরিয়া দেখা দেওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও এনজিও ব্র্যাক নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসার পাশাপাশি গ্রামবাসীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি বলে তিনি জানান।

জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. বিভাষ চাকমা বলেন, ‘উপজেলায় সবচেয়ে দুমদুম্যা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ম্যালেরিয়া দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত গ্রামগুলোতে রোগের বিস্তার এখনো আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমাদের কয়েকটি চিকিৎসক দল এখনো চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। গত প্রায় তিন মাসে ৫০৩ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে আগামী মাসে ম্যালেরিয়া কমে আসবে। মে, জুন ও জুলাই মাসে বেশি ম্যালেরিয়া থাকে।