মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল আসছে শনিবার

রাখাইনে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গাদের বোঝাতে বাংলাদেশ সফরে আসছে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল। দেশটির পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি আগামী শনিবার সকালে কক্সবাজার যাবে। তারা দুদিন সেখানে থাকবে। অবশ্য গত বছরও মিয়ানমারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছিল। তবে তাতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কোনো গতি আসেনি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটির সফরের সময় আসিয়ানের (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের আঞ্চলিক জোট) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক মানবিক সহায়তা কেন্দ্র বা আহা সেন্টারের একটি প্রতিনিধিদলও কক্সবাজার সফর করবে। রাখাইনের পরিবেশ নিয়ে গত মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর সমালোচনার মুখে পড়ে আহা সেন্টার। ওই প্রতিবেদনকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে সমালোচনা করেছে আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ দেশ মালয়েশিয়া।

ঢাকা ও ইয়াঙ্গুনের কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার এখন পর্যন্ত কী কী করেছে, সেটি কক্সবাজারের শিবিরে আশ্রয় নেওয়া লোকজনকে বোঝাবেন মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা। একই সময় আহা সেন্টারের প্রতিনিধিরাও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে থেকে পরিস্থিতির সর্বশেষ চিত্র বোঝার চেষ্টা করবেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরুর আগে আন্তর্জাতিক সমালোচনা প্রশমন করতে চায় মিয়ানমার। সে লক্ষ্যেই বাংলাদেশে প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে তারা। বাংলাদেশে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল পাঠাতে চীনেরও একটি ভূমিকা রয়েছে। মিয়ানমার এবং আহা সেন্টারের প্রতিনিধিরা কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করে কী ধারণা পেলেন, ঢাকায় ফিরে তা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের জানাবেন।

রোহিঙ্গাদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করা আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতা মহিব উল্লাহ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার থেকে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, রাখাইনে ফিরে যেতে চায় রোহিঙ্গারা। কিন্তু সেই ফিরে যাওয়াটা স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপত্তার সঙ্গে হতে হবে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের অধিকারের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলকে এ বিষয়গুলোই তাঁরা বলবেন।

আহা সেন্টারের প্রতিবেদনের সমালোচনা করে রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ বলেন, ওই প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট বলে আমরা শুরুতেই তা প্রত্যাখ্যান করেছি। ওই প্রতিবেদনে রাখাইনের ৮০০ গ্রামের মধ্যে মাত্র দুটি গ্রামের বর্ণনা আছে। ৪০০-৫০০ গ্রাম যে পোড়ানো হয়েছে, তার কোনো বর্ণনা নেই।

এ মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সফরের সময় মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহ কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। ঢাকায় ফিরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আহা সেন্টারের প্রতিবেদন নিয়ে মালয়েশিয়া যথেষ্ট সমালোচনামুখর। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আহা সেন্টারকে আরও সমন্বিত সুপারিশ সামনে আনতে হবে। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই, এই মুহূর্তে আস্থার সংকট রয়েছে। লোকজন (রোহিঙ্গা) তো ফিরে যেতে চায়। তাঁদের যাওয়াটা নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ হতে হবে।