আইএসের দায় স্বীকার, তদন্তের আগে কিছু বলতে চায় না পুলিশ

রাজধানীর দুটি পুলিশ বক্সের কাছে মঙ্গলবার রাতে বোমা ফেলে রাখার ঘটনায় দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম প্রচারকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স এক টুইট বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।

এর আগে গত ৩০ এপ্রিল গুলিস্তানে ট্রাফিক পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ছোড়া এবং ২৬ মে মালিবাগে পুলিশের এসবি (বিশেষ শাখা) কার্যালয়ের সামনে একটি পিকআপে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। পিকআপটি ছিল পুলিশের। দুই ঘটনাতেই দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় আইএস। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দেশকে অস্থিতিশীল করতে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।

মঙ্গলবারের ঘটনায় আবারও আইএসের দায় স্বীকারের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা তদন্ত শেষে বলা যাবে।

মঙ্গলবার রাতে পল্টন ও খামারবাড়ি এলাকায় দুটি পুলিশ বক্সের কাছ থেকে বোমা উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে খামারবাড়ি এলাকার বোমাটি উদ্ধার করতে রোবট ব্যবহার করেন ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগের বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দলের সদস্যরা। দিবাগত রাত তিনটার দিকে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। একই দিন রাত সোয়া ১০টার দিকে পল্টন মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে একটি কার্টন পড়ে থাকতে দেখে কৌতূহলী হন পুলিশ সদস্যরা। ওই কার্টনের ভেতরে তার প্যাঁচানো একটি বস্তু দেখে পুলিশের বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দলকে ডাকা হয়। পরে দিবাগত রাত একটার দিকে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করা হয়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খামারবাড়ি পুলিশ বক্সের অনেক দূরে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা আছে। ওই ক্যামেরায় ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ অস্পষ্ট। পল্টনের ঘটনাতেও আশপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরা থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগের বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দলের উপকমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধার করা দুটি বোমা ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)। দুটো বোমাই একই ধরনের, শক্তির দিক থেকে মাঝারি মানের। বোমা দুটির চারদিকে সাতটি করে গ্যাসভর্তি ছোট কনটেইনার (গ্যাসলাইটের মতো) স্থাপন করা ছিল। আতঙ্ক ছড়াতেই বোমা দুটি সেখানে রাখা হয়েছিল বলে মনে করেন তিনি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে মালিবাগ ও গুলিস্তানে হামলায় ব্যবহার করা বোমার সঙ্গে খামারবাড়ি ও পল্টনের বোমার প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন। দেশীয় কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর কাজ হতে পারে এটি।

ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের উপকমিশনার প্রলয় কুমার জোয়ারদার প্রথম আলোকে বলেন, খামারবাড়ি ও পল্টন থেকে উদ্ধার করা বোমার আলামত সংগ্রহ করে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য বিস্ফোরক অধিদপ্তরে পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে। গুলিস্তান ও মালিবাগে হামলায় ব্যবহৃত বোমার আলামতের প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তবে এসব ঘটনায় কাউকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি।

পল্টন থানায় করা মামলায় বলা হয়, দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে এবং সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিসাধন করতে বোমা রেখেছে। আর তেজগাঁও থানার মামলায় বলা হয়, অজ্ঞাতনামা আসামিরা জনগণের জানমাল ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বোমা রেখেছিল।