অন্তর্বিভাগের শয্যা খালি, বহির্বিভাগে রোগীর ভিড়

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত মোস্তফা-হাকিম মাতৃসদন হাসপাতালের বহির্বিভাগে অপেক্ষা করছে রোগী ও স্বজনেরা। গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায়।  প্রথম আলো
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত মোস্তফা-হাকিম মাতৃসদন হাসপাতালের বহির্বিভাগে অপেক্ষা করছে রোগী ও স্বজনেরা। গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায়। প্রথম আলো

প্রতিষ্ঠার পর সিটি করপোরেশন মেমন মাতৃসদন হাসপাতাল প্রসূতিসেবায় অনন্য অবদান রেখেছিল। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে একসময় প্রচণ্ড ভিড় ছিল রোগীর। এখন আগের সেই অবস্থা নেই। অন্তর্বিভাগের রোগী নেমেছে অর্ধেকে। একইভাবে করপোরেশন পরিচালিত অন্য তিনটি ৫০ শয্যার মাতৃসদনের অন্তর্বিভাগও প্রায় রোগীশূন্য।

এই চার মাতৃসদনের বহির্বিভাগে রোগী রয়েছে প্রচুর। একইভাবে সদরঘাটের ১০০ শয্যার সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালেও অন্তর্বিভাগে রোগী নেই। বহির্বিভাগে সেবাদানের মধ্য দিয়ে চলছে এই হাসপাতালও। এর বাইরে করপোরেশন পরিচালিত ৬০টি দাতব্য চিকিৎসালয় রয়েছে। এগুলোতে বহির্বিভাগে বিভাগে সেবা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ইপিআই, অর্থাৎ টিকা কার্যক্রম রয়েছে।

নগর ও উপজেলায় প্রসূতিসেবা কার্যকর করা, বেসরকারি খাতে উন্নত হাসপাতাল গড়ে ওঠাসহ নানা কারণে করপোরেশন পরিচালিত মাতৃসদন এবং জেনারেল হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে রোগী নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম আকতার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্তর্বিভাগে রোগী কম হলেও করপোরেশনের সব হাসপাতালে বহির্বিভাগে প্রচুর রোগী রয়েছে। জেনারেল হাসপাতালে অন্তর্বিভাগে রোগী একেবারে নেই। তবে আমরা এখন এখানে প্রসূতিসেবাও চালু করছি। রোগী কীভাবে বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা করছি।’

নতুন মেয়র ক্ষমতা গ্রহণের পর গত ৪ বছরে করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ ১২ লাখের বেশি রোগীর সেবা দিয়েছে বলে দাবি করেছে।

মেমন মাতৃসদন

গত বুধবার সরেজমিনে সদরঘাটের মেমন মাতৃসদনে দেখা গেছে, অন্তর্বিভাগে রোগী রয়েছে ৪৬ জন। ৫০টি জেনারেল শয্যা খালি পড়ে রয়েছে। সব রোগী শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছে। অস্ত্রোপচার কক্ষের সামনে দেখা গেছে অপেক্ষমাণ চার পাঁচজনকে। মো. হাসান নামের একজন জানান, তাঁর এক স্বজনকে এখানে ভর্তি করিয়েছেন। স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। সেবা নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এখানে ১ হাজার ৫৫৯টি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হয়েছে ১ হাজার ১২টি। সব মিলিয়ে চার হাজারের মতো অন্তর্বিভাগে সেবা নিয়েছেন। হাসপাতালটিতে ১০ শয্যার নবজাতক ওয়ার্ড রয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিদিন বহির্বিভাগে শিশু এবং প্রসূতি মিলে প্রায় ১০০ জন রোগী হয়। এখানে সিজার খরচ পড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।

সিনিয়র কনসালট্যান্ট প্রীতি বড়ুয়া বলেন, বহির্বিভাগে প্রচুর রোগী থাকে। অন্তর্বিভাগে একসময় অনেক রোগী থাকত। এখন কিছুটা কমেছে।

তিনি আরও বলেন, একসময় চিকিৎসক ও নার্সের সংকট থাকলেও তা এখন নেই। ৩০ জন চিকিৎসক এবং প্রায় ৩৫ জন নার্স এখন কাজ করেন।

মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের ইনচার্জ আশীষ কুমার মুখার্জি বলেন, এখানে কম খরচে সিজারসহ অন্যান্য সেবা দেওয়া হচ্ছে।

অন্যান্য হাসপাতাল

করপোরেশন পরিচালিত বাকি তিনটি মাতৃসদনও রোগীখরায় ভুগছে। ৫০ শয্যার কাট্টলী মোস্তফা–হাকিম মাতৃসদন হাসপাতালে গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় দেখা যায়, পাঁচজন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে সবই প্রসূতি।

বাংলাবাজার থেকে আসা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ‘এখানে চিকিৎসা নিয়েছিলাম আগে থেকেই। গতকাল এসে ভর্তি হয়েছি। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রসব হয়েছে। কোনো সমস্যা হয়নি।’

হাসপাতাল সূত্রে জানায়, গত মাসে এখানে ২৪টি স্বাভাবিক প্রসব, ১১টি সিজার হয়েছে। অন্যান্য রোগী ছিল ৩৩ জন। বহির্বিভাগে রোগী ছিল ৩ হাজার ৩৬৯ জন। হাসপাতালের ইনচার্জ মো. নাছিম ভূঞা বলেন, অন্তর্বিভাগে রোগী কম থাকলেও বহির্বিভাগে প্রতিদিন অনেক রোগী হয়। সিজারও হয় এখানে।

মোহরা ছাফা মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতালও ৫০ শয্যার। এখানে দিনে পাঁচ থেকে ছয়জন রোগী থাকে। মাসে ছয়-সাতটি অস্ত্রোপচারও হয়। বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন রোগী হয়। বন্দরটিলা সিটি করপোরেশন মাতৃসদনেও বহির্বিভাগে দিনে গড়ে ৫০ জন রোগী হয় বলে জানা গেছে।