কারাবন্দীরা হাসপাতালে আয়েশে

গ্রেপ্তারের পর খাজা শাহাদাত উল্লাহ।  ফাইল ছবি
গ্রেপ্তারের পর খাজা শাহাদাত উল্লাহ। ফাইল ছবি

সোনা চোরাচালানের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া খাজা শাহাদাত উল্লাহ টানা সাড়ে তিন মাস ধরে হাসপাতালের বিছানায় আয়েশে দিন পার করছেন। তাঁর জটিল কোনো রোগের কথা জানা যায়নি। কারাগারের কাগজপত্রে লেখা, ‘ইনফেকশন, লো ব্যাক পেইন’। সারা দেশে তাঁর মতো শতাধিক বন্দী কারাগারের বাইরে হাসপাতালে রয়েছেন।

খাজা শাহাদাত উল্লাহ আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের কারাকক্ষে। সেখানে তাঁর সহযোগীদের অবাধ যাতায়াত। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার পর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খাজা শাহাদাতের লাগেজ তল্লাশি করে ১২ কেজি ৬০০ গ্রাম সোনা উদ্ধার করা হয়, যার দাম ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ওই দিনই বিমানবন্দর থানায় সোনা চোরাচালানের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তিনি বাংলাদেশ তাইওয়ান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যানও।

খাজা শাহাদাতের এভাবে মাসের পর মাস হাসপাতালে থাকা নিয়ে বিরক্ত বিএসএমএমইউ প্রশাসন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছাড়ছে না। তাঁর চিকিৎসা করছেন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক এ কে এম সালেক। গত বৃহস্পতিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি একটু ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। আমি তো তাঁকে দুই মাস আগে ছুটি দিয়ে দিয়েছি। তারপরও কী করে থাকছেন আমার জানা নেই।’

এদিকে কারা কর্মকর্তারা প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন, তাঁর বড় কোনো রোগ নেই। সরকারের উচ্চপর্যায়ের তদবিরে ও নির্দেশেই তাঁকে রাখা হচ্ছে। 

বিএসএমএমইউ প্রিজন সেলে দায়িত্বরত কারারক্ষী হাবিব হাওলাদারের কাছে খাজা শাহাদাতের শারীরিক অবস্থা কেমন দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যার অনেক ভালো আছেন, কোনো সমস্যা নেই।’ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ এপ্রিল খাজা শাহাদাত উল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়।

>খাজা শাহাদাত উল্লাহর মতো শতাধিক কয়েদি ও হাজতি হাসপাতালে। বড় কোনো রোগ নেই।

আরও যাঁরা হাসপাতালে আছেন 

কারা অধিদপ্তর থেকে ১ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুনের আসামিসহ সারা দেশে বেশ কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী চিকিৎসার জন্য কারাগারের বাইরে হাসপাতালে অবস্থান করছেন। ঢাকার বাইরে ৬৫টি কারা হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় সেখানকার বন্দীদের চিকিৎসার জন্য বাইরের হাসপাতালে যাওয়ার একধরনের যুক্তি রয়েছে। ওই তালিকায় খাজা শাহাদাত ছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন, যাবজ্জীবন খুনের আসামি শামসু হাবিব বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন জেলার শতাধিক বন্দীর নাম রয়েছে। 

কেন্দ্রীয় কারাগারের নথিপত্র অনুযায়ী, ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনকেও আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গত ১১ মার্চ। সাড়ে চার মাস তিনি হাসপাতালে আছেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর বেশির ভাগ সময়ই তিনি বারডেম, ঢাকা মেডিকেল, বিএসএমএমইউয়ে ছিলেন। হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদের ছোট ভাই নূরুল ইসলাম রিফাত হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শামসু হাবিব। তাঁকে হাসপাতালে আনা হয় গত ২৪ জুন।

 সাজাপ্রাপ্ত হাজতি ও কয়েদিদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার সুপারিশ করেছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান ও মো. খুরশীদ আলম। জানতে চাইলে মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া আমরা কাউকে হাসপাতালে পাঠাইনি। যাঁরা অসুস্থ, তাঁদেরই পাঠিয়েছি।’

সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে এভাবে হাসপাতালে রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ মাহবুবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরো বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করে। তাঁরা যতক্ষণ না বলবে আমরা তো কারাগারে ফিরিয়ে আনতে পারি না।’

এর আগে বিভিন্ন অজুহাতে আসামিদের দীর্ঘ সময় হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে প্রথম আলোতে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনগুলো প্রকাশের পর রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সব কয়েদিকে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।