ডেঙ্গুতে স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কা

বগুড়ায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই মশা নিধনের জন্য ওষুধ দিচ্ছেন বগুড়া পৌরসভার এক কর্মী। গতকাল সকালে বগুড়া শহরের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে।  ছবি: প্রথম আলো
বগুড়ায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই মশা নিধনের জন্য ওষুধ দিচ্ছেন বগুড়া পৌরসভার এক কর্মী। গতকাল সকালে বগুড়া শহরের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। ছবি: প্রথম আলো

উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন মাহজাবিন ফারজানা। ভর্তি হয়েছিলেন রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে। উঠেছিলেন লালমাটিয়া এলাকার একটি বেসরকারি ছাত্রীনিবাসে। কিন্তু এডিস মশার কামড়ে এখন স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

শুধু মাহজাবিন নন, পড়াশোনার জন্য ঢাকায় গিয়ে এখন ডেঙ্গুতে স্বপ্ন ধূসর তাঁর মতো অনেক শিক্ষার্থীর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার বেসরকারি বড় দুটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে চলতি জুলাই মাসে ১০৮ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬ জন। গতকাল রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন। এখন চিকিৎসাধীন ৩৬। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ৬ এবং ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪ জন। এর বাইরে শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন আরও ৪ জন। হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া রোগীদের বেশির ভাগই রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তির জন্য ঢাকায় কোচিং করতে গিয়েও অনেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসা চললেও ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে। এতে বাড়তি চিকিৎসা খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রোগীদের। 

পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড বগুড়ার জনসংযোগ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় চলতি মাসে ৭৯ জনের শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। এর মধ্যে দুজন চিকিৎসকও রয়েছেন। পপুলারে ডেঙ্গু রোগীদের এনএসওয়ান পরীক্ষার জন্য ১ হাজার ২০০, আইজিজি ও আইজিএম (একত্রে) ১ হাজার টাকা এবং সিবিসির জন্য ৫৩০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

 অন্যদিকে ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার বগুড়ার ব্যবস্থাপক ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মাসে ৩৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের এখানে ডেঙ্গুর পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ কম নেওয়া হচ্ছে।

>

জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০৮
৬০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন
ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে ৬ জনকে

গতকাল সরেজমিনে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে ৩০ জন এবং নারী ওয়ার্ডে ৬ জন রোগীর দেখা মিলেছে।

হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করতে দেখা গেল ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মারজান ইসলামকে। ছেলের এ অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন মা নিলুফা ইয়াসমিন। একবার নার্সের টেবিলে, একবার ছেলের শয্যায় ছোটাছুটি করছিলেন তিনি।

 নিলুফা বলেন, রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ৩২ নম্বর সড়কে একটি মেসে থাকতেন তাঁর ছেলে। অসুস্থ হয়ে পড়লে পরীক্ষা–নিরীক্ষায় ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। সেখানে হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে গতকাল বগুড়ায় এসে এই হাসপাতালে ভর্তি হন। এ পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

রাজধানীর বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আরিফ হাসানও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিন দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাবা গোলাম ফারুক বলেন, হাসপাতালে শুধু চিকিৎসাটাই মিলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা সব বাইরের রোগনির্ণয় কেন্দ্র থেকে করতে হচ্ছে।

রোগীদের সঙ্গে আসা স্বজনেরা জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর ডেঙ্গু জ্বর পরীক্ষার জন্য রক্তে এনএসআই এন্ট্রিজেন, আইজিজি ও আইজিএম এবং সিবিসি ও প্লাটিলেট পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোতে এসব পরীক্ষায় গুনতে হচ্ছে গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক মুসা আল মুনসুর বলেন, হাসপাতালে ব্যবস্থা না থাকায় আইজিজি ও আইজিএমসহ ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য কয়েকটি পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হচ্ছে।

 হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আরিফুর রহমান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি কাজ করছে।