সড়কে দুধ ঢেলে খামারিদের প্রতিবাদ

মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকায় বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সধারী ১৪ কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি পাঁচ সপ্তাহের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো হঠাৎ করে দুধ সংগ্রহ বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পাবনার নয় উপজেলার খামারিরা। দুধ বিক্রি করতে না পেরে ও ন্যায্য দাম না পেয়ে সড়কে দুধ ঢেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন খামারিরা।

আজ সোমবার অবশ্য আদালতের আদেশে ১৪ কোম্পানির মধ্যে মিল্ক ভিটার পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিপণনে আট সপ্তাহের জন্য আইনগত বাধা কেটেছে। আজ চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান শুধু মিল্ক ভিটার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন।

হাইকোর্টের গতকাল রোববারের নিষেধাজ্ঞার পর আজ পাবনার বেশির ভাগ জায়গায় দুধের দাম অর্ধেকে নেমে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো দুধ কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় আজ সকাল থেকেই দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েন খামারিরা। অনেকে বাধ্য হয়ে অর্ধেক দামে দুধ বিক্রি করেছেন, আবার অনেকে বিক্রি করতে না পেরে আত্মীয়দের বাড়ি বাড়ি দুধ পাঠান।

সড়কে দুধ ঢেলে প্রতিবাদ করেছেন খামারিরা। ভাঙ্গুরা, পাবনা, ২৯ জুলাই। ছবি: হাসান মাহমুদ
সড়কে দুধ ঢেলে প্রতিবাদ করেছেন খামারিরা। ভাঙ্গুরা, পাবনা, ২৯ জুলাই। ছবি: হাসান মাহমুদ

দুধ বিক্রি করতে না পারায় ভাঙ্গুরা উপজেলার খামারিরা সকাল থেকেই বিক্ষোভ করতে থাকেন। বেলা একটার দিকে খামারিরা একজোট হয়ে ভাঙ্গুরা বাসস্ট্যান্ড বাজারে মানববন্ধন করেন। এরপর কয়েক শ লিটার দুধ সড়কে ঢেলে প্রতিবাদ জানান তাঁরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার নয় উপজেলায় মোট ৬ হাজার ৫৬৪ টি দুধ উৎপাদনের খামার আছে। খামারগুলোয় দুধ উৎপাদনকারী গাভি আছে ১ লাখ ৭০ হাজার। এসব গাভি থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ লাখ লিটার দুধ পাওয়া যায়। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদন হয় ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর, চাটমোহর, বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলায়। দেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এলাকাগুলো থেকে দুধ সংগ্রহের পর পাস্তুরিত করে বাজারজাত করে। মোট উৎপাদিত দুধের অর্ধেকের বেশি দুধ এসব প্রতিষ্ঠান খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিজস্ব কারখানায় নিয়ে যায়। বাকি দুধ বিভিন্ন মিষ্টি, দই, ঘি, মাঠা উৎপাদন প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়।

জেলার ১২ থেকে ১৫ জন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সমিতির মাধ্যমে দুধ একত্র করে খামারিরা প্রাণ, মিল্ক ভিটা, আড়ংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করেন। এসব প্রতিষ্ঠান প্রতি লিটার দুধ ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় কিনে নেয়। কিন্তু আজ প্রতিষ্ঠানগুলো দুধ না কেনায় কিছু দুধ স্থানীয় বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা লিটার দামে বিক্রি করতে পেরেছেন। অনেকে দুধ বিক্রি করতে না পেরে আত্মীয়দের বাড়িতে পাঠিয়েছেন।

খামারি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খামারিরা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে খামার করেছেন । প্রতিদিন গাভির খাবার ও পরিচর্যা বাবদ খরচ হয়। দুধ বিক্রি করতে না পারলে খামারিদের বিপদের সীমা থাকবে না। আরেক খামারি হারুন আর রশীদ বলেন, খামার আর দুধ নিয়েই খামারিদের জীবন-জীবিকা চলে। দুধ বিক্রি করতে না পারলে পথে বসতে হবে।

দুধ বিক্রি করতে না পেরে ও ন্যায্য দাম না পেয়ে পাবনায় সড়কে দুধ ঢেলে প্রতিবাদ করেছেন খামারিরা। ভাঙ্গুরা, পাবনা, ২৯ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
দুধ বিক্রি করতে না পেরে ও ন্যায্য দাম না পেয়ে পাবনায় সড়কে দুধ ঢেলে প্রতিবাদ করেছেন খামারিরা। ভাঙ্গুরা, পাবনা, ২৯ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

জানতে চাইলে প্রাণ ডেইরি হাব চাটমোহর শাখার ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘উৎপাদন বন্ধ থাকলে আমাদের দুধ সংগ্রহের উপায় থাকে না। তাই আপাতত দুধ সংগ্রহ বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুমতি পেলেই আবার সংগ্রহ শুরু করা হবে।’ মিল্ক ভিটার ভাঙ্গুরা দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রের কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান বলেন, আজ থেকে দুধ ক্রয় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

ভাঙ্গুরা পৌরসভার মেয়র গোলাম হাসনায়েন বলেন, ‘এক দিন দুধ বিক্রি বন্ধ মানে খামারে এক দিন গরুর খাবার বন্ধ। খামারিদের সঙ্গে প্রাণীগুলোও বিপদে পড়বে। ফলে আমরা দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের দাবি করি।’

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আল মামুন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরো পাবনা জেলাতেই প্রচুর দুধ উৎপাদন হয়। তবে চলনবিলের কাছাকাছি উপজেলাগুলোতে দুধ উৎপাদন বেশি হয়। এসব এলাকার মানুষ দুধ উৎপাদনের ওপর নির্ভর করেই জীবন চালান। আমরা চাই দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক।’