আবার বাড়ছে পানির দাম

নগরবাসীকে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি দিতে না পারার অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই ঢাকা ওয়াসা আবারও পানির দাম বাড়াচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগে পানির দাম বাড়ানো হবে ৫ শতাংশ হারে।

ওয়াসার দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাস থেকে আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ইউনিটের (১ হাজার লিটার) পানির দাম দিতে হবে ১১ টাকা ৫৭ পয়সা। আগে ছিল ১১ টাকা ২ পয়সা। বাণিজ্যিক সংযোগে পানির দাম ৩৫ টাকা ২৮ পয়সার স্থলে ৩৭ টাকা ৭ পয়সা হবে।

ঢাকা ওয়াসার প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, ওয়াসা আইন, ১৯৯৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী ওয়াসা বোর্ড প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বাড়াতে পারে। পানির প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের সামঞ্জস্য রাখা এবং বর্তমান মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করতে দাম বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি ১ হাজার লিটার পানি উৎপাদনে খরচ হয় ১৭ টাকার বেশি বলে জানান তিনি।

তবে বছরে একবার বাড়ানোর কথা বলা হলেও একই বছরে ওয়াসার একাধিকবার পানির দাম বাড়ানোর নজির আছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে
জুলাই মাসে এক দফায় ৫ শতাংশ এবং নভেম্বরে আরেক দফায় একসঙ্গে ১৭ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। এ বিষয়ে ওয়াসার বক্তব্য হচ্ছে, ভর্তুকি কমাতেই ২০১৬ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুই দফায় পানির দাম বাড়ানো হয়।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুলাইতে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল ওয়াসা। সংস্থাটির সূত্র জানায়, ২০০৯-এ বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে প্রতি ইউনিট পানির দাম ছিল ৫ টাকা ৭৫ পয়সা।

>

আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ইউনিট পানির দাম দিতে হবে ১১ টাকা ৫৭ পয়সা
বাণিজ্যিক সংযোগে পানির দাম হবে ৩৭ টাকা ৭ পয়সা।

এদিকে সেপ্টেম্বর থেকে পানির দাম বাড়ানোর খবর জানার পর নগরীর বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকেরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বাসাবো কদমতলা এলাকার বাসিন্দা মোতাহার হোসেন বলেন, তাঁদের এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানি পান করা যায় না। কদমতলা পানির পাম্পের সীমানার ভেতরেই একটি সংস্থার বিশুদ্ধ পানি বিক্রি হয়। কার্ড বানিয়ে আলাদা দামে সেই পানি কিনতে হয়। ওয়াসার পানির বিলের বাইরেই গ্রাহকদের এই টাকা গুনতে হয়।

রামকৃষ্ণ মিশন রোডের একটি অ্যাপার্টমেন্টের ফ্ল্যাট মালিক শরাফত আলী বলেন, ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে নির্ভর করা যায় না, বিশেষ করে পান করার ক্ষেত্রে। তাই ফ্ল্যাটের মালিকেরা চাঁদা তুলে গভীর নলকূপ বসিয়েছেন। তবে ওয়াসার পানি ব্যবহারের জন্য প্রতি মাসেই বিল দিতে হয়। এবার বিলের অঙ্ক আরও বেশি হবে।

পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার পান্নিটোলার বাসিন্দা তরুণ ঘোষ বলেন, সব সময়ই বাইরে থেকে পানি কিনতে হয়। ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া গেলেও বকেয়া বিল আদায়ের জন্য ওয়াসা এলাকায় মাইকিং করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ভয় দেখায়।

মিরপুর ১১ নম্বর বি ব্লকের বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদ অভিযোগ করেন, পানির লাইনে সমস্যার কারণে অনেক সময় কলে পানি আসে না, কিন্তু বিল দিতে হয় প্রতি মাসে।

রাজধানীতে ঢাকা ওয়াসার পানির সংযোগ রয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজারের মতো। এই সংযোগ থেকে এক কোটির বেশি মানুষ পানি পায় বলে ওয়াসার দাবি। আর এবার দাম বাড়ানোর মাধ্যমে ওয়াসার মাসিক বিল গড়ে ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।