রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহায়তার প্রতিশ্রুতি জাপানের
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো আজ মঙ্গলবার কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শিবির পরিদর্শন করেন। জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে রাখাইনের বর্বর নির্যাতন, ধর্ষণ ও গণহত্যার বিবরণ তুলে ধরেছেন রোহিঙ্গা নেতারা। এ সময় নেতারা স্বেচ্ছায় এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে জাপান সরকারের সহযোগিতা চান। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সম্মানের সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
আজ বেলা দুইটার দিকে কুতুপালং ৪ নম্বর শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে ১৫ জন রোহিঙ্গা নেতা উপস্থিত ছিলেন। রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে টালবাহানা করছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গারা জন্মভূমি রাখাইনে ফিরে যেতে আগ্রহী। কিন্তু তার আগে মিয়ানমারকে ঘোষণা দিয়ে বলতে হবে, রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিক। তারপর সেখানে (রাখাইনে) রোহিঙ্গাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার নিরাপত্তা এবং ফেলে আসা বসতভিটা ধনসম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে, নইলে কোনো রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি হবে না।
নেতারা বলেন, একই দাবির কথা তাঁরা মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সদস্যদেরও জানিয়ে দিয়েছেন। মিয়ানমার প্রতিনিধিদল এ ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গে আরও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে ফিরে গেছেন।
রোহিঙ্গা নেতাদের উদ্দেশে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাপান চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, সম্মান এবং নিরাপত্তার সঙ্গে প্রত্যাবাসন শুরু হোক। এ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে জাপান। কিছুদিন পর তিনি মিয়ানমার সফরে যাবেন। প্রত্যাবাসন নিয়ে তিনি মিয়ানমারের সঙ্গেও কথা বলবেন। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১১ লাখ শরণার্থীর বোঝা বাংলাদেশের জন্য বড় চাপ। এ চাপ সামলাতে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শনের আহ্বান জানান তিনি।
তবে সফরের বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি জাপানি মন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আবুল কালাম বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে প্রথম আলোকে অবহিত করেন।
মোহাম্মদ আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে রোহিঙ্গা নেতারা নিরাপদ প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে জাপানের সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এবং নাগরিকত্বসহ কয়েক দফা দাবি তুলে ধরেছেন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ঢাকা থেকে বেলা সাড়ে ১১টায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বেলা একটার দিকে সড়কপথে তিনি পৌঁছান উখিয়ার কুতুপালং ৪ নম্বর শিবিরে। এরপর তিনি বিভিন্ন ক্যাম্পের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র, শিশু শিক্ষাকেন্দ্র, ত্রাণকেন্দ্র এবং জাপান সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এ সময় একটি ত্রাণকেন্দ্রে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণসামগ্রীও বিতরণ করেন মন্ত্রী । বেলা আড়াইটায় জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিবিরে কর্মরত সরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
তিন দিনের সফরে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২৯ জুলাই বাংলাদেশ সফরে আসেন।
গত ২৭ জুলাই দুই দিনের সফরে উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে আসে মিয়ানমারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থোয়ে দলের নেতৃত্ব দেন। দলের সদস্যরা ৩৫ রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করে তাঁদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু রোহিঙ্গা নেতারা নাগরিকত্ব প্রদানসহ তিন দফা বাস্তবায়নের ঘোষণা চান। নইলে কোনো রোহিঙ্গা রাখাইনে ফিরতে রাজি না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।