নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ফাইল ছবি
সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ফাইল ছবি

ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

আজ বুধবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী সৈয়দ সায়েদুল হক। আগামী ২০ আগস্ট মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের শুনানির দিন ধার্য করেছেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক শেখ নাজমুল আলম।

মামলার বাদী সৈয়দ সায়েদুল হক আদালতকে বলেন, ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তিনি নুসরাত জাহান রাফি নামের এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি করেন। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর গত ২৭ মার্চ মামলা আসামি মোয়াজ্জেম হোসেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান এবং অধ্যক্ষকে থানায় ডেকে আনেন। জিজ্ঞাসাবাদের নামে আসামি মোয়াজ্জেম হোসেন নুসরাত জাহানের ভিডিও আইন বহির্ভূতভাবে ধারণ করেন। এই ভিডিওটি পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। গত ১১ এপ্রিল এই ভিডিওটি তিনি ইউটিউবসহ সামাজিক গণমাধ্যমে দেখতে পান।

সৈয়দ সায়েদুল হক আদালত আরও বলেন, আসামি মোয়াজ্জেম হোসেন জিজ্ঞাসাবাদের নামে নুসরাত জাহানকে জেরা করতে করতে অনেক অশ্লীল আপত্তিকর মানহানিকর প্রশ্ন করতে থাকেন। এমনকি নুসরাত জাহান রাফির নাম-পরিচয়ও প্রকাশ করেন। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করায় গত ৬ এপ্রিল নুসরাত জাহান রাফিকে মুখোশধারী কয়েকজন তার শরীরে আগুন দেয়। পরবর্তীতে গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত জাহান মারা যান। তার মৃত্যুর পর আসামি মোয়াজ্জেম হোসেন যে ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন তা সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কাও দেখা যায়।

মামলার বাদী সৈয়দ সায়েদুল হকের জবানবন্দি গ্রহণ শেষ হলে তাঁকে জেরা করতে শুরু করেন মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহমেদ। আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হকের কাছে জানতে চান, এই ঘটনা জানার পর মামলা করার জন্য তিনি কোনো থানায় যোগাযোগ করেছিলেন কি না? জবাবে সায়েদুল হক আদালতকে জানান, তিনি থানায় মামলা করতে যাননি। আইনজীবী ফারুক আহমেদ সাইদুল হকের কাছে আরও জানতে চান, এই মামলা করার আগে নুসরাত জাহান রাফির বাবা-মা কিংবা ভাইয়ের অনুমতি নিয়েছিলেন কি না? জবাবে সাইদুল হক আদালতকে বলেন, তিনি অনুমতি নেন নি। সচেতন নাগরিক হিসেবে তিনি এ মামলা করেছেন।

গত ১৭ জুলাই ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

সেদিন সাইবার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নজরুল ইসলাম ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে জানান, আপনার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি ধারার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এই তথ্য তুলে ধরে পিপি মোয়াজ্জেমের কাছে জানতে চান, ‘আপনি কী দোষী?’ জবাবে সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমি নির্দোষ।’

ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতের আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে গত ১৫ এপ্রিল মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গত ২৭ মে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। আদালত তা আমলে নিয়ে সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর ২০ দিনের মাথায় গত ১৬ জুন মোয়াজ্জেম হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।