এনআরসি প্রসঙ্গ তুললে বাংলাদেশ জবাব দেবে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

বাংলাদেশ মনে করে, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরি (এনআরসি) সে দেশের ‘নিজস্ব ও অভ্যন্তরীণ’ বিষয়। আগামী মাসে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় তাই সেই ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ ওঠার কোনো কারণ নেই।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে যে আলোচ্যসূচি পাঠানো হয়েছে, তাতে এনআরসি নেই। ভারতও মঙ্গলবার যে আলোচ্যসূচি পাঠিয়েছে, তাতে এনআরসির উল্লেখ নেই। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে, নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই বৈঠকে এনআরসি প্রসঙ্গ উত্থাপন করবেন। আসামের চিহ্নিত অ–নাগরিকদের ফেরত পাঠানো নিয়ে কথা বলবেন।

বাংলাদেশ সরকার মনে করে, ভারতের আসামের বাংলাভাষী মুসলিমদের অধিকাংশকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি’ বলা সেখানকার রাজনীতিতে অনেক পুরোনো ইস্যু। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ তোলা হলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হবে, এ দেশ থেকে কোনো মুসলমান ভারতে যায়নি। এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হলে যাঁরা অ–নাগরিক বলে চিহ্নিত হবেন, তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ভারতকেই নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছু করার নেই। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে আলোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।

এই কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন, দুই দেশের আলোচ্যসূচিতে এনআরসির উল্লেখ না থাকলেও ‘বিবিধ’ আলোচনায় ভারত বিষয়টি তুললেও তুলতে পারে। সে জন্য বাংলাদেশের যথেষ্ট প্রস্তুতিও রয়েছে। ভারত আগে কখনো দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এই বিষয় উত্থাপন করেনি। এবার ‘বিবিধ’ প্রসঙ্গের মধ্যে তারা এনআরসি তুললে বাংলাদেশ তাদের অভিমত জানাবে। ভারতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এ–সংক্রান্ত তথ্যভান্ডারও তৈরি করেছে।

জানতে চাইলে স্বরষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, এবারের বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকে পুলিশের প্রশিক্ষণ, সীমান্তে হত্যা বন্ধ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও মানব পাচার সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, দুই দেশের ক্ষেত্রে সব সমস্যাই অভিন্ন। তাই যাতে একযোগে দুই দেশ কাজ করতে পারে, সেই কৌশল খোঁজা হবে। অভ্যন্তরীণ এবং সীমান্ত সমস্যা অভিন্ন বলে দুই দেশের সহযোগিতা ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আসামের এনআরসি নিয়ে আলোচনা হলে বাংলাদেশের জবাব কী হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়টি আলোচনায় আসার কথা নয়। তবে আলোচনায় এলে আমরা আমাদের যুক্তি তুলে ধরব।’

এনআরসি খসড়া তালিকা অনুযায়ী, আসামে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে পারেননি। ৩১ আগস্ট সেই তালিকা প্রকাশের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু রাজ্যে বন্যাজনিত কারণে সেই সময়সীমা এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকের আলোচ্যসূচি চূড়ান্ত

৭ আগস্ট নয়াদিল্লিতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সে জন্য ৬ আগস্ট দিল্লি যাবেন। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদি সরকারের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এটাই হতে চলেছে প্রথম বৈঠক। দ্বিপক্ষীয় স্তরে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এটি হবে সপ্তম বৈঠক। তবে ভারতের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের এটি হবে প্রথম বৈঠক। লোকসভা ভোটের আগে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের মন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়। গত বছর জুলাইয়ে ষষ্ঠ বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকা এসেছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।

ভারত-বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে এক নম্বরে রাখা হয়েছে ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি এবং ২০১১ সালে সীমান্ত চুক্তির প্রটোকল বাস্তবায়নের পর্যালোচনা। দ্বিতীয় আলোচনায় রয়েছে নিরাপত্তা। আলোচনা হবে জঙ্গিবাদ বা বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে তৎপরতা, গোয়েন্দাদের তথ্য আদান–প্রদান, সংঘবদ্ধ অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ, জাল ভারতীয় মুদ্রা, মাদক ও মানব পাচারে সহযোগিতার ক্ষেত্র পর্যালোচনা। তৃতীয় আলোচনা সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে। ‘বিবিধ’ আলোচনায় এনআরসি এবং গুরুত্বপূর্ণ ও সমসাময়িক কিছু বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।