জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হচ্ছেন পার্বত্য নারীরা

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধারা ও প্রভাব’ বিষয়ক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা। ঢাকা, ১ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধারা ও প্রভাব’ বিষয়ক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা। ঢাকা, ১ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো

জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশের পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ভূমি, ফসল উৎপাদন ও পানি ব্যবস্থাপনা। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ওই এলাকার নারীরা।

রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ বৃহস্পতিবার মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধারা ও প্রভাব’ বিষয়ক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে। সেখানে উঠে আসে এসব তথ্য।

সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সির (সিডা) অর্থায়নে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের আওতায় এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন গবেষক নাদিরুজ্জামান। তিনি বলেন, এ গবেষণাটি মূলত পার্বত্য অঞ্চলের মানুষদের অভিজ্ঞতা থেকে করা হয়েছে। যেখানে খাগড়াছড়ির ৯৫ শতাংশ, লক্ষ্মীছড়ির ৮২ শতাংশ, রাঙামাটি সদরের ৭৪ শতাংশ এবং নানিয়ারচরের ৯৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন যে, পাহাড়ের জীববৈচিত্র্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের অনেক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

নাদিরুজ্জামান আরও বলেন, এই অঞ্চলের বনভূমি ও ভূ–প্রকৃতি পরিবর্তনের ফলে এখানে পানির সংকট দেখা যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে ফসল উৎপাদনের ধরন, যা সরাসরি নারীদের জীবনযাপনকে প্রভাবিত করে। কারণ, কৃষি ও পশুপালনই এসব এলাকার নারীদের পেশা। তাঁদের জীবন আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুদত্ত চাকমা, পরিবেশবিজ্ঞানী আইনুন নিশাত, সিডার প্রকল্প পরামর্শক মাহবুবুর রহমান ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।

শাহীন আনাম বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জলবায়ু পরিবর্তন প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট। এখানে যেসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন তাঁরা সংখ্যালঘু। আমরা যাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাঁদের উচিত আরও বেশি করে এই মানুষদের পাশে দাঁড়ানো।’

আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন যেভাবে হচ্ছে তাতে মাত্র ১০০ বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে, যা মোকাবিলা করা পৃথিবীর মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য হবে। দ্রুত এ পরিবর্তনের ফলে ফসলহানি হবে। খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোকেও খাদ্য আমদানি করতে হবে। এই পরিবর্তনকে ধীর করতে হলে সঠিক পথে কাজ করতে হবে। জলবায়ু তহবিল সঠিক পথে ব্যয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্ব আরোপ করেন আইনুন নিশাত।

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুদত্ত চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমি কাগজে–কলমে থাকলেও, তা এখন অনেকটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সরকার, এনজিও এবং সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে এখনই পদক্ষেপ না নিলে বাকি বনভূমিও বাঁচানো সম্ভব হবে না। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা পার্বত্য অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন নিবিড়ভাবে লক্ষ করতে আবহাওয়া কেন্দ্র স্থাপন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থাসহ নানা বিষয়ে সুপারিশ করেন।