ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রশাসন ও আ.লীগ কর্মীরা মাঠে

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্যে নাগরিক সভা হয়। সভায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্যে নাগরিক সভা হয়। সভায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস

সরকারের প্রশাসন ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাঠে রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া দেশে দুধের মান–সম্পর্কিত গুজব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে এ–সম্পর্কিত যথাযথ পরীক্ষায় গুজব ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে। 

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার বিকেলে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলের ওয়েস্ট মিনস্টার এলাকার সেন্ট্রাল হলে নাগরিক সভায় প্রদত্ত ভাষণে সম্প্রতি দেশের ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, তাঁর ব্যক্তিগত চাওয়া–পাওয়ার কিছুই নেই। তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত চাওয়া–পাওয়ার কিছু নেই। যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা একদিন দেশ স্বাধীন করেছিলেন, তার বাস্তবায়নই আমার একমাত্র লক্ষ্য।’

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি তাঁর শেষনিশ্বাস অবদি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাবেন। তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতা একদা বাংলাদেশকে উন্নত–সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়ন করতে আমি মৃত্যুকেও ভয় পাই না। জাতির পিতার অসম্পূর্ণ স্বপ্নপূরণে আমি আমার শেষনিশ্বাস অবদি কাজ করে যেতে চাই।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ এ নাগরিক সভার আয়োজন করে। এই সভায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে সব বয়সের প্রবাসী বাংলাদেশিরা কালো ব্যাজ ধারণ করে দলে দলে যোগদান করেন। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগেই সভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। হলরুমভর্তি শ্রোতার নীরবতার মধ্যে শেখ হাসিনা ভাষণের শুরুতে ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার তাঁর মা-বাবা-ভাই এবং তাঁদের স্ত্রীসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের স্মরণ করেন। এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে যান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার খুনিদের শাস্তি না দিয়ে জিয়াউর রহমান তখন খুনিদের পুরস্কৃত করেন। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনিদের শুধু দায়মুক্তিই দেননি, উপরন্তু বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন এবং বিভিন্ন গণ–অন্দোলনে তাঁদের ভূমিকারও প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দেশে প্রবাসীদের আরও বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের শিল্পায়নে এবং জনগণের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা দেশব্যাপী ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। দেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের সুযোগ নিয়ে আপনারাও এখানে বিভিন্ন মিল–ফ্যাক্টরি গড়ে তুলতে পারেন।’

দেশের উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ইতিমধ্যেই দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্যের হারকে আরও কমিয়ে আনতে চাই। যাতে এই দেশে আর কেউ গৃহহীন না থাকে, ক্ষুধার জ্বালায় যেন কেউ কষ্ট না পায় এবং কেউ যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।’

দেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে তাঁর সরকারের সময়ের উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় থাকাতেই দেশ আজ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

নির্বাচনে অনীহাই বিএনপির ভরাডুবির কারণ
গত ৩০ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের প্রতি বিএনপির অনীহাই তাদের ভরাডুবির মূল কারণ। তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছিল আর তাই তারা মনোনয়ন–বাণিজ্য করেছে, একটি আসনে পাঁচ থেকে ছয়জনকে পর্যন্ত মনোনয়ন দিয়েছে।’

বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের কথা স্মরণ করে সরকারপ্রধান বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তাদের অপশাসনে এ দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, তাদের (বিএনপি-জামায়াত) নেতৃবৃন্দ সীমাহীন দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং এতিমের অর্থ আত্মসাতের সঙ্গেও যুক্ত ছিল।’ এ সময় ২০১৩–১৫ সালে সরকার উৎখাত এবং নির্বাচন প্রতিহতের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বিপুলসংখ্যক জনগণকে হত্যা ও আহত করার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী–শিশু কাউকেই তারা রেহাই দেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৮১ সালে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথা স্মরণ করে বলেন, তাঁকে এবং তাঁর বোন শেখ রেহানাকে ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর সে সময়ের শাসকেরা আর দেশে ফিরতে দেয়নি। তিনি আরও বলেন, ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জোর করে দেশে ফিরলেও একের পর এক তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।

গুজব সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে
সম্প্রতি দেশের ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশাসন ছাড়াও তাঁর দলীয় কর্মীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া দেশের দুধের মান–সম্পর্কিত গুজবের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে এ–সম্পর্কিত যথাযথ পরীক্ষায় গুজব ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ধরনের গুজব সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে এর কারণে দেশের উন্নয়ন যেন বাধাগ্রস্ত না হয়।’

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাংবাদিক কলামিস্ট আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বক্তব্য দেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মুহম্মদ ফারুক খান ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।