চট্টগ্রামে সড়কের ওপর পশুর হাট

চট্টগ্রাম নগরে সড়কের ওপর শর্ত ভঙ্গ করে পশুর হাট বসানো হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় স্টিলমিল বাজার এলাকায়।  সৌরভ দাশ
চট্টগ্রাম নগরে সড়কের ওপর শর্ত ভঙ্গ করে পশুর হাট বসানো হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় স্টিলমিল বাজার এলাকায়। সৌরভ দাশ

গাড়ি ও জনসাধারণের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে হাট বসানোর জন্য ইজারাদারদের স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কিন্তু তা না মেনে অন্তত তিনটি এলাকায় রাস্তার ওপর হাট বসিয়েছেন ইজারাদারেরা। এতে গাড়ি চলাচল ব্যাহত হয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। 

হাটগুলো হচ্ছে নগরের স্টিলমিল পশু বাজার, পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয় মাঠ পশু বাজার ও কমল মহাজন হাট পশু বাজার। এই তিনটি হাটই বসানো হয়েছে নগরের এম এ আজিজ সড়ক (বিমানবন্দর সড়কের একটি অংশ) ও এর সঙ্গে যুক্ত সড়কের ওপর। এই সড়কের ওপর এখন চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। নির্মাণকাজের ভোগান্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাস্তার ওপর পশুর হাট বসানোর দুর্ভোগ।  

এই তিনটি ছাড়া পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরে আরও তিনটি অস্থায়ী হাটের ইজারা দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এগুলো হচ্ছে বাকলিয়ার কর্ণফুলী গরু বাজার, সল্টগোলা রেলক্রসিং–সংলগ্ন বাজার ও পতেঙ্গার প্রজাপতি পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের মাঠ। নগরের স্থায়ী তিন পশুর হাট হচ্ছে সাগরিকা গরু বাজার, বিবিরহাট গরু বাজার ও পোস্তারপাড় ছাগল বাজার। 

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে নগরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে পশুর হাট বসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিটি করপোরেশনের অনুমতি না নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা এসব হাট বসিয়েছেন বলে জানা গেছে। 

পশুর হাট নিয়ে বিশৃঙ্খলা এড়াতে আজ সোমবার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি করপোরেশন। করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট এসব অভিযান পরিচালনা করবেন। 

সাতটি শর্তে অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা দেয় সিটি করপোরেশন। উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো হচ্ছে ইজারাদারকে নিজ উদ্যোগে বাজার রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। গাড়ি ও জনসাধারণের চলাচল পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না এবং গরু বহনকারী গাড়ি রাস্তায় দাঁড় করিয়ে ওঠা-নামা করা যাবে না। 

শর্তে আরও বলা হয়, গরু বহনকারী গাড়ি ব্যাপারীরা তাঁদের ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো হাটে নিতে পারবেন। তাঁদের চলাচলে কোনো প্রকার বাধা দেওয়া যাবে না। গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া বিক্রি হতে শতকরা ৫ টাকা হাসিল বা টোল আদায় করা যাবে।

গতকাল রোববার দুপুরে নগরের স্টিলমিল বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের খাল পাড় সড়কের ওপর খুঁটি ও শামিয়ানা টানানো হয়েছে। দোকানের সামনে এসব খুঁটি স্থাপন করা হয়। আবার গাড়ি থেকে গরু নামানো হচ্ছিল রাস্তার ওপরেই। এতে সড়কে যানচলাচল স্থবির হয়ে যায়। 

যোগাযোগ করা হলে হাটের ইজারাদার কাজী আনোয়ার হাফিজ সড়কের ওপর বাজার বসানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, গতবার মূল সড়কের ওপর হাট বসানো হয়েছিল। এবার নিজস্ব জায়গায় হাট বসানো হয়েছে। যানচলাচলে যাতে কোনো বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। 

স্থানীয় এক দোকানি বলেন, গরুর হাটের জন্য রাস্তা দিয়ে চলাচল যায় না। দোকান খোলা থাকলেও লোকজন তেমন আসতে পারছে না। যখন হাট পুরোপুরি জমে উঠবে তখন দোকানে বসা যাবে না। 

স্টিলমিল বাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে পাশাপাশি বসেছে কমল মহাজন হাট ও পতেঙ্গা পশুর বাজার। দুটি বাজারই বসেছে এম এ আজিজ সড়কের ওপর। সড়কের দুই পাশে বাঁশের খুঁটি বসানো হয়। 

রাশিদুল হাসান নামের এক এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশনের নিয়ম না মেনে ইজারাদারেরা ইচ্ছে মতন হাট বসিয়েছেন। তাঁরা এলাকাবাসীর দুর্ভোগ নিয়ে কোনো চিন্তা করেননি। 

কমল মহাজন হাটের ইজারাদার এম এ কালাম অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, পাশের দুটি হাটের লোকজন তাঁদের হাটে গরু আসতে দিচ্ছেন না। গরুর গাড়িগুলো জোর করে তাঁদের হাটে নিয়ে যাচ্ছেন। 

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয় মাঠের ইজারাদার মো. আবুল হোসেন। তিনি বলেছেন, মূল সড়কে যাতে যানজট না হয় সে জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছেন।  

পশুর হাট বসাতে ইজারাদারদের শর্ত ভঙ্গের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তার ওপর বাজার এবং অবৈধ হাটের বিষয়ে কিছু অভিযোগ পেয়েছেন। এর বিরুদ্ধে করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটরা আজ সোমবার থেকে অভিযান শুরু করবেন।