ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটের সংকট কাটছে

ডেঙ্গু শনাক্তকরণে ব্যবহৃত উপকরণ
ডেঙ্গু শনাক্তকরণে ব্যবহৃত উপকরণ

ডেঙ্গু জ্বর শনাক্তকরণ পরীক্ষার উপকরণের (কিট) সংকট কাটতে শুরু করেছে। তবে চাহিদা বাড়ায় ব্যবসায়ীরা কিটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানিয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত কিট দেশে রয়েছে। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গতকাল সোমবার পর্যন্ত আমদানিকারকদের কাছে প্রায় ৩ লাখ ৯৩ হাজার কিট মজুত রয়েছে।

বিভিন্ন কোম্পানিকে আরও ১ কোটি ৬১ লাখ কিট আমদানির অনাপত্তিপত্র দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ করে কিট দেশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিট-সংক্রান্ত তথ্য জানাতে একটি হটলাইন চালু করেছে অধিদপ্তর।

এদিকে দ্রুত ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষার কিট, ডেঙ্গু রিএজেন্ট এবং প্লাটিলেট ও প্লাজমা পরীক্ষার কিট আমদানিতে সব ধরনের আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট, আগাম কর ও অগ্রিম কর প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল এনবিআর এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই সুবিধা আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পাবেন আমদানিকারকেরা।

ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরুর পর জ্বর হলেই মানুষ চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে। চিকিৎসকেরাও ঝুঁকি না নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে দিচ্ছেন। হাজারো মানুষ রক্ত পরীক্ষার জন্য হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছে। এতে বাজারে টান পড়ে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিটের। তবে গতকাল রাজধানীর দুটি সরকারি এবং সাতটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট রয়েছে।

শুধু গত শনিবার সকাল থেকে কিট শেষ হয়ে যাওয়ায় পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। গতকাল অনেকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে এসে ফিরে যান। 

নারিন্দা পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে শিশুসন্তানসহ চিকিৎসা নিতে আসা সালাম হাফিজ বলেন, হাসপাতাল পরীক্ষার যেভাবে প্রচারণা করেছে, কিট ফুরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা তো সেভাবে দেয়নি। রোগীদের ডেকে এনে হয়রানি করা হচ্ছে।

মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার প্রথম আলোকে বলেন, সরবরাহকারীকে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। আজ (গতকাল সোমবার) রাতে অথবা কাল সকালে কিট পাওয়া যাবে।

গত চার দিনে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়েছেন ৩ হাজার ১০৩ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ১৫৭ জনের। হাসপাতালের পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো কিট রয়েছে।

ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের রেনেসাঁ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. ওবায়দুল হক বলেন, মধ্যে কিছুদিন কিটের স্বল্পতা থাকলেও এখন সংকট নেই। তবে প্রতিটি কিট ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

হাসপাতাল ও পরীক্ষাগার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইউরোপ ও কোরিয়ায় তৈরি ভালো মানের একটি কিট যেখানে ৩২০-৩৫০ টাকায় পাওয়া যেত, সেটি এখন ৫০০ টাকায় উঠেছে। চীনের তৈরি কিট ছিল দেড় শ টাকার মধ্যে। সেটা এখন ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কিট আমদানি করে। কিটের বেশি দামের বিষয়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হসপি ল্যাব এসেনশিয়ালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম বাকি প্রথম আলোকে বলেন, অনেক কিট দেশে এসেছে। সরকার কর সুবিধা দিয়েছে। আরও কিট আসছে। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে কিটের মানের দিকেও নজর দেওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।

হাসপাতালগুলো যেন সহজে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট পেতে পারে, সে জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যেন সহজে কিট আমদানি করতে পারে, সে জন্য এনবিআর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ‘০১৭০৮-৫০৬০৪৭’ হটলাইন চালু করেছে। এই হটলাইনে ফোন করে সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার কোন আমদানিকারকের কাছে কত কিট মজুত রয়েছে, তা জানতে পারবে এবং চাহিদা অনুযায়ী সংগ্রহ করতে পারবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকারি হাসপাতালগুলোকে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সদর হাসপাতালে ১০ লাখ এবং উপজেলা হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলো বরাদ্দের টাকা দিয়ে কিট সংগ্রহ করতে পারবে।