সিলেটের মুগনীছড়ায় আধা কিমিতে ময়লার ছড়াছড়ি

সিলেটের মুগনী ছড়া ময়লাা–আবর্জনায় ভরা। ছড়া না ময়লার ভাগাড়, তা দেখে বোঝার উপায় নেই। গত শনিবার সিলেট নগরের তেলিহাওর এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
সিলেটের মুগনী ছড়া ময়লাা–আবর্জনায় ভরা। ছড়া না ময়লার ভাগাড়, তা দেখে বোঝার উপায় নেই। গত শনিবার সিলেট নগরের তেলিহাওর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

সুরমা নদীসংলগ্ন এলাকায় সিলেটের মুগনীছড়ার আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গৃহস্থালি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ি। ময়লার স্তূপে অনেক স্থানে ছড়া ভরাট হয়ে আছে। এতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে; বংশ বিস্তার করছে মশা-মাছি। 

জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখার কর্মকর্তা মো. হানিফুর রহমান বলেন, এক মাস আগেও মুগনীছড়ায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা-আবর্জনা এসে ওই অংশে জড়ো হচ্ছে। বর্জ্যের মধ্যে পলিথিন এবং প্লাস্টিকসামগ্রীই বেশি। নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা শুধু সিটি করপোরেশনের একার দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাসিন্দারা একটু সচেতন হলে এ ধরনের সমস্যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। ছড়া-খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে প্লাস্টিক ও পলিথিন পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। 

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, গত এপ্রিল মাসজুড়ে নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ওই সময়ে নগরের ছড়া-খালগুলোও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। শুধু ওই সময় নয়, সিটি কর্তৃপক্ষ সারা বছরই ছড়া-খালে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালায়। নগরের ছড়া-খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযানও পরিচালিত হচ্ছে নিয়মিত। এর ফলে এখন নগরে জলাবদ্ধতা তেমন দেখা যায় না। কিন্তু মানুষজন ছড়া-খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করার ব্যাপারে সচেতন হচ্ছে না। এ কারণে কদিন পরই ছড়া-খালে ময়লার স্তূপ তৈরি হচ্ছে। আর মুগনীছড়ার ওই অংশ দিয়ে পানি সুরমা নদীতে পড়ে। ফলে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা গিয়ে নদীসংলগ্ন ওই এলাকায় জড়ো হচ্ছে।  

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, মুগনীছড়া নগরের রিকাবীবাজার, মির্জাজাঙ্গাল হয়ে তালতলা তেলিহাওর এলাকা দিয়ে কাজীরবাজারসংলগ্ন সুরমা নদীতে মিলেছে। তেলিহাওর থেকে সুরমা নদী পর্যন্ত ছড়াটির প্রায় আধা কিলোমিটার অংশজুড়ে ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ি। প্লাস্টিকের বোতল, ব্যাগ, গ্লাস ও থালা, কর্কশিট, কলাপাতা, গাছ, পশুহাটের উচ্ছিষ্ট খড়, বস্তা ও পলিথিন ব্যাগ, হোটেল-রেস্তোরাঁর ময়লা, গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনা কী নেই সেখানে। ছড়ার পানির ওপরে ময়লা-আবর্জনা এখন স্তূপ হয়ে আছে। আবর্জনার মধ্যে বৃষ্টির পানি জমে আছে। তাতে ওড়াউড়ি করছে মশা-মাছি। 

ছড়ার এই অংশের পাশে রয়েছে সিলেট নগরের বৃহৎ পশুহাট কাজীরবাজার। এই এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল, একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রেস্তোরাঁ, ভাঙারির দোকান, সুপারির দোকান, মুদির দোকান, ফার্মেসি ও কলার আড়ত। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এসব প্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনা নির্বিঘ্নে ছড়ায় ফেলা হচ্ছে। দিনের পর দিন ময়লা ফেলতে থাকায় এখন স্তূপ তৈরি হয়ে গেছে। এতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে ছড়ার পানিপ্রবাহে। 

স্থানীয় তিনজন ব্যবসায়ী বলেন, নগরের বিভিন্ন অংশের ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানিতে ভেসে ছড়ার পানিতে মিশছে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবেও কিছু ময়লা-আবর্জনা ছড়ায় ফেলা হচ্ছে। সামনে কোরবানির ঈদ। ওই সময়ে ময়লা-আবর্জনা আরও বেশি উৎপন্ন হবে। তখন অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।    

তালতলার তেলিহাওর এলাকার বাসিন্দা রাজীব খান বলেন, ময়লা-আবর্জনার কারণে ছড়ার পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া সম্প্রতি সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ছড়ার পানিতে মশা জন্মাচ্ছে। তিনি দ্রুত ছড়ার ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।