শেরপুরে 'বন্ধুকযুদ্ধে' চরমপন্থী দলের আঞ্চলিক নেতাসহ নিহত ২

বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় চরমপন্থী-ডাকাত দলের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চরমপন্থী দলের আঞ্চলিক নেতাসহ দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের গোপীনপুর সেতুর কাছে সীমাবাড়ি-রানীরহাট সড়কে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ এই ঘটনা ঘটে। শেরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বুলবুল ইসলাম প্রথম আলোকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

পুলিশের দাবি, নিহত দুজনের মধ্যে একজন নিষিদ্ধঘোষিত পূর্ব বাংলা সর্বহারা দলের নেতা আফজাল হোসেন (৫৫)। বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার বামিহাল গ্রামে। আফজালের বিরুদ্ধে নাটোরের সিংড়া থানার বামিহাল পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, অস্ত্র লুট, তিন আনসার সদস্যকে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন থানায় ২০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে হত্যা, ডাকাতি, খুন, অস্ত্র, চাঁদাবাজি ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে।

অপর নিহত ব্যক্তি গাইবান্ধা সদরের কাঁচদহ গ্রামের ধনেশ ওরফে সুকুমার (৩৮)। তাঁর বিরুদ্ধে গাইবান্ধা ও বগুড়ার বিভিন্ন থানায় খুন, হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১১টি মামলা রয়েছে।

বগুড়া পুলিশের মুখপাত্র (গণমাধ্যম) এবং সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী আজ বুধবার ভোরে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞার কাছে খবর আসে, গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর বাজারের পাশে গোলাগুলি হচ্ছে। পুলিশ সুপার দ্রুত ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

সনাতন চক্রবর্তী জানান, এসপির নির্দেশ পেয়ে শেরপুর সার্কেলের এএসপি গাজিউর রহমান, শেরপুর থানার ওসি হুমায়ুন কবিরসহ ফোর্স সঙ্গে নিয়ে দ্রুত সেখানে পৌঁছান। এ সময় সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুই ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। একজন নিজেকে আফজাল এবং অন্যজন ধনেশ বলে পরিচয় দেন। আহত ব্যক্তিদের দ্রুত উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরে পুলিশের সিডিএমএস (ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) খুঁজে দেখা যায়, চরমপন্থী দলের দলনেতা আফজালের নামে নাটোরের সিংড়া উপজেলার বামিহাল পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা-লুট মামলাসহ বিভিন্ন থানায় ২০টি এবং ধনেশের নামে বিভিন্ন থানায় ১১টি ডাকাতির মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির আঞ্চলিক নেতা আফজাল ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি নাটোর সদর উপজেলার ফুলবাগান এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, একটি পাইপগান ও দুটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৯ এপ্রিল পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের ১৪ জেলার চরমপন্থী দলের ৫৯৫ জন সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এই আত্মসমর্পণের আগের রাতে (৮ এপ্রিল) বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর বাজারে গভীর রাতে পোস্টার সাঁটানোর সময় টহল পুলিশের সামনে পড়ে সর্বহারা দলের সদস্যরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সর্বহারা সদস্যদের গোলাগুলি হয়। এ ঘটনায় পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নান্নু মিয়া পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, নাটোরের সিংড়া ও বগুড়ার শেরপুর থানার পুলিশ ব্যাপক অভিযান চালায়। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ২৭ এপ্রিল রাতে শেরপুর থানার ভবানীপুরে বন্দুকযুদ্ধে নিষিদ্ধঘোষিত পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির দুই সদস্য সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার পশ্চিম পাইকোরা গ্রামের লিটন এবং রায়গঞ্জ উপজেলার অর্জুনি গ্রামের আফসার নিহত হন।

সনাতন চক্রবর্তী জানান, চরমপন্থী দল এবং ডাকাত দলের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। কাকতালীয়ভাবে মুখোমুখি হওয়ায় এক পক্ষ অন্য পক্ষকে চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে এই বন্ধুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।