নিখোঁজের ১৫ ঘণ্টা পর আ.লীগ নেতার লাশ উদ্ধার

মাগুরার শ্রীপুরের কুমার নদ থেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হাট শ্রীকোল, শ্রীপুর, মাগুরা, ৭ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো।
মাগুরার শ্রীপুরের কুমার নদ থেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হাট শ্রীকোল, শ্রীপুর, মাগুরা, ৭ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো।

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কুমার নদে নিখোঁজ আওয়ামী লীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল কুমার নদ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে।

নিহত আমিরুল ইসলাম (৪৫) শ্রীপুরের শ্রীকোল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে নদীতে নামার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা অবশ্য অভিযোগ করেছেন, নদীতে নামার পর পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন।

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল থেকে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আজ সকাল সাড়ে নয়টায় খুলনা থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল আমিরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পানিতে ডুবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হচ্ছে। আর প্রক্রিয়া অনুযায়ী থানায় একটা অপমৃত্যু মামলা হবে। তাঁর শরীরে কোনো গুলি বা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে কোনো গুলি বা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের পর বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।’

নিহত আমিরুল ইসলামের বাড়ি শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল গ্রামে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমিরুল ইসলাম শ্রীকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিরও সভাপতি। শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুতাসিম বিল্লা ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ১০ জুন স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙার ঘটনায় আমিরুলসহ দুই শতাধিক ব্যক্তির নামে মামলা চলছে। এ ছাড়া শ্রীপুর থানায় করা প্রতিপক্ষের একটি মামলায় আসামি ছিলেন আমিরুল।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গতকাল বিকেলে হাট শ্রীকোল বাজারে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে বসে ছিলেন আমিরুল। এ সময় পুলিশের একটি গাড়ি বাজারে এসে থামলে তিনি নদীর দিকে দৌড় দেন। পুলিশও তাঁকে ধাওয়া করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানিয়েছেন, আমিরুল নদীতে নেমে গেলে পুলিশের সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের নৌকা নিয়ে মাঝনদীতে গিয়ে আমিরুলকে মারধর করে। এরপরই ডুবে যান তিনি। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের দুই সদস্যকে মারধর করে।

নিহত ব্যক্তির স্ত্রী মরিয়ম নেছার অভিযোগ, মাঝনদীতে আমিরুলকে গুলি করেছে পুলিশ। এমনকি আমিরুল যখন ডুবে যাচ্ছিলেন, কয়েকজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে চাইলেও তাদের গুলি করার হুমকি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘একটা মানুষ চোখের সামনে ডুবে যাচ্ছে, পুলিশ তো তহন তারে বাঁচাবি। কিন্তু উল্টো গুলি করিছে তারা।’

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, গতকাল হাট শ্রীকোল বাজারে মাদক উদ্ধারের অভিযানে গিয়েছিল ডিবি পুলিশের একটি দল। তারা আমিরুলকে ধরতে সেখানে যায়নি, তাঁকে ধরতে গেলে থানার পুলিশ যাবে। পুলিশ দেখে আমিরুল হয়তো আতঙ্কে দৌড় দেন। এ সময় ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) ওলিয়ার রহমান ও কনস্টেবল বুলবুল তাঁর পিছু নেন। তবে আমিরুল নদীতে নামার পর পুলিশ সদস্যরা পাড়েই থেমে যান। তাৎক্ষণিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সাঁতার জানলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ডুবে গেছেন। এ সময় পুলিশ কেন তাকে বাঁচাল না—এই অভিযোগে স্থানীয় লোকজন ওই দুই পুলিশ সদস্যকে মারধর করেন বলে তিনি দাবি করেন।