নওগাঁয় গরু প্রচুর, দামও সহনীয়

ঈদুল আজহা উপলক্ষে নওগাঁয় হাটগুলোতে কোরবানির গবাদিপশুর বেচাকেনা জমে উঠেছে। হাটগুলোতে গরু উঠছে প্রচুর। এগুলোর দামও রয়েছে সহনীয় পর্যায়ে। ব্যাপারী, ক্রেতা ও হাটের ইজারাদারেরা এই তথ্য দিয়েছেন।

ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত গরুর দাম তুলনামূলক কম ও সহনীয়। তবে খামারি ও গৃহস্থেরা কেউ কেউ লোকসানের আশঙ্কা করছেন। তাঁরা বলছেন, হাটগুলোতে প্রচুর গরু আমদানি হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন কোরবানি দেওয়ার জন্য গরু কিনলেও ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় বড় বাজারের ব্যাপারী ও গরু ব্যবসায়ীরা গরু কিনছেন না। ফলে বেচাবিক্রি আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার কম। এই কারণে প্রত্যাশার চেয়ে কম দামে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এ অবস্থা থাকলে লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করতে হবে কিংবা অনেক গরু অবিক্রিত থেকে যাবে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁয় ছোট–বড় ১০৪টি হাট রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী গবাদিপশুর হাট রয়েছে ৩৮টি। মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া, সতি, নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া, মহাদেবপুর মাতাজী, নওগাঁ সদরের ত্রিমোহনী, বদলগাছীর কোলা, রানীনগরের আবাদপুকুর, আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ, পত্নীতলার মধইল, পোরশার মশিদপুর ও সাপাহারের দিঘীরহাটে গবাদিপশু বেশি বিক্রি হয়।

গত সোমবার বেলা তিনটার দিকে নওগাঁর দ্বিতীয় বৃহত্তম হাট নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের ছাতড়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, ভটভটি, নছিমন ও ট্রাকে করে গরু আসছে। এই হাটে ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকার গরু বিক্রি হচ্ছে। পশুর হাট নির্দিষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে সড়ক ও পাশের কৃষিজমির মাঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

ছাতড়া পশুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার হাটে গরুর আমদানি বেশি। হাটে এবার ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে। তারপরও এখানে প্রচুর গরু আনা হয়েছে। দামও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষই দাম নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে আমদানির তুলনায় বেচাবিক্রি কিছুটা কম। আগামী হাটে ঢাকা-চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা গরু কিনলে বেচাবিক্রি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মান্দা উপজেলার বৈদ্যপুর এলাকা থেকে গরু কিনতে এসেছিলেন একটি বেসরকারি কলেজের প্রভাষক হামিদুল ইসলাম। তিনি একটি গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। গরুর দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৪৫ হাজার টাকায় এই মাঝারি আকারের বকনা কিনলাম। ধারণা করছি, ২ মণ ১০ কেজি থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত মাংস হতে পারে। গতবার এ ধরনের গরু ৪৮-৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে তুলনায় এবার দাম কিছুটা কমই রয়েছে।’

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা থেকে নিজের খামারে পালন করা ১০টি গরু নিয়ে গত শুক্রবার জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট মান্দার চৌবাড়িয়া বাজারে এসেছিলেন শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বড় আকৃতির ১০টি গরু এনেছেন। প্রতিটি গরুর দাম ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা হবে বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু দাম বলছে ৮০-৮২ হাজার টাকা। এবার হাটে ঢাকা-চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা এখনো তেমনভাবে আসেননি। এ জন্য দাম উঠছে না। শেষ হাট পর্যন্ত এ রকম দাম থাকলে এবার গরু বিক্রি করে লাভ হবে না।

চৌবাড়িয়া গরুর হাটের পাশেই ছাগলের হাট। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জমজমাট বেচাকেনা চলছে। হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি ইমদাদুল হক মোল্লা বলেন, চৌবাড়িয়া হাটে ছোট-বড়, মাঝারি সব ধরনের গরু-ছাগল বিক্রি হচ্ছে। কোরবানির সময় প্রতি হাটে এখানে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার গরু-ছাগল বিক্রি হয়। এখানে কোরবানির জন্য ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ৬ লাখ টাকায় গরু বেচাকেনা হচ্ছে। আর ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দামে ছাগল বিক্রি হচ্ছে। গতবারের তুলনায় এবার হাটে গরু-ছাগলের আমদানি বেশি। দামও কিছুটা কম রয়েছে।