চার বছর ধরে শুধুই ভোগান্তি

সংস্কারের অভাবে বেহাল। খানাখন্দ আর গর্তে চলাই দায় হয়ে পড়েছে। গত সোমবার কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা সড়কের উড়াদীঘি এলাকায়।  প্রথম আলো
সংস্কারের অভাবে বেহাল। খানাখন্দ আর গর্তে চলাই দায় হয়ে পড়েছে। গত সোমবার কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা সড়কের উড়াদীঘি এলাকায়। প্রথম আলো

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা থেকে সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা পর্যন্ত সড়কটি চার বছর ধরে বেহাল হয়ে পড়ে আছে। এক-দুই ফুট পরপর সড়কজুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে হেলেদুলে চলছে যানবাহন। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষ সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে এলেও গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক সংস্কার হচ্ছে না।
সড়কটি সংস্কারে গত বছরের এপ্রিলের প্রথম দিকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে ৩১০ কোটি ৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো সংস্কারকাজ শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই এমনটি ঘটছে বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ।
কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা ২১ কিলোমিটার সড়কই বেহাল। বর্তমানে কোথাও পিচ না থাকায় ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে দেওলি, বাউসী, বাইশধার, দশধার, উড়াদিঘী, নিশ্চিন্তপুর, ধলপুর, তেঘরীয়া, হিরাকান্দা, গোমাই, আশারানী, পাবই, গোতুরা, পাঁচউড়া, বাহাদুরকান্দাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গর্তের সংখ্যা বেশি।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সওজ কর্তৃপক্ষ দেড়–দুই বছর আগে মাঝেমধ্যে ওই গর্তে কিছু ভাঙা ইট–খোয়া ও বালু ফেলে যেত। কিন্তু গত বছর একনেকে প্রকল্প পাস হওয়ার পর থেকে এখন আর তা–ও দেখা যায় না। যদিও এসব সামগ্রী ফেলার পর দু–তিন দিন পর আগের অবস্থায়ই ফিরে আসত।
সড়কটির প্রস্থ ১২ ফুট হওয়ায় একসঙ্গে দুটি বাস ও ট্রাক অতিক্রম করতে বেশ সময় লাগে। একটি ট্রাক ও বাসের প্রস্থ সর্বনিম্ন ৮ ফুট। এ কারণে গাড়িচালকেরা আতঙ্কে থাকেন। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাঁদের। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে ধরমপাশা, দুর্গাপুর ও কলমাকান্দার প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা করে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া প্রতিদিন শতাধিক পর্যটক কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরের আসেন। কিন্তু সড়কটি মেরামত না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে সড়কটি দেখে মনে হয় চাষের জমি। আর রোদে ধুলাবালুতে একাকার হয়ে থাকে পুরো সড়ক।
গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের ঠাকুরাকোনার পার হতেই শুরু হয় বিধ্বস্ত অংশ। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, নছিমন, করিমন, বাস, বালুভর্তি ট্রাকসহ ছোট-বড় বিভিন্ন যানবাহনে ঠাসা পুরো সড়ক। যাত্রী নিয়ে হেলেদুলে চলছে এসব যান। কোথাও কোথাও গর্তে পড়ে আটকে আছে যান।
শহরের সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক সেকুল মিয়া জানান, সড়কটিতে যাত্রীর অভাব হয় না। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অনেক মানুষ এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে।
প্রতিদিন শহর থেকে শত শত মানুষ কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে পাহাড় দেখতে যায়। তাই যানবাহনের চাপ বেশি থাকে।
সড়কের উড়াদীঘি এলাকায় একটি বাস আটকা পড়েছিল। বাসটির চালক মনিরুল ইসলাম জানান, প্রায় চার বছর ধরে সড়কটি ভাঙা। আগে এ সড়ক দিয়ে তিনি প্রতিদিন ছয়বার যাত্রী নিয়ে আসা-যাওয়া করতে পারতেন। প্রতিবার মাত্র আধা ঘণ্টা সময় লাগত। এখন এ পথ পাড়ি দিতে তিন থেকে চার ঘণ্টা চলে যায়। যাত্রী নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে বাস চালাতে হয়। গর্তে আটকা পড়ে বাস বিকল হয়ে পড়ে। চাকা ফেঁসে যায়।
সড়কের পাশে পাবই বারের ব্যবসায়ী মিরাজ আলী আক্ষেপ করে বলেন, ‘সড়কটি নিয়ে এখন এ অঞ্চলের মানুষ রীতিমতো দুঃখে আছে। শুনেছি সংস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রী একনেকে বড় একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু ১ বছর ৪ মাস চলে গেলেও কেন যে কাজ হচ্ছে না বুঝতে পারছি না!’
এ বিষয়ে সওজ নেত্রকোনার নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার প্রথম আলোকে বলেন, সড়কটি ২৪ ফুট প্রশস্তকরণসহ সংস্কারের ৩১০ কোটি ৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ১০০ কোটি টাকা এবং ১১টি সেতুর জন্য প্রায় ৭৩ কোটি টাকা রয়েছে। সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু সড়ক সংস্কারের জন্য যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজের অনুমোদন পেয়েছিল, ইজিপির নিয়ম অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানের কাজের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং না থাকায় আবার নতুন করে গত মে মাসে পুনরায় টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। এখন মূল্যায়ন কমিটি ঠিকাদার নির্বাচন করবে। হয়তো কয়েক দিনের মধ্যে তা সম্পন্ন হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী দিদারুল আলম বলেন, ঈদের যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে গর্তে কিছু ইট, খোয়া ও বালু ফেলা হচ্ছে।