ভ্যানচালক ফুটবলারের পাশে সাবেক অধিনায়ক আমিনুল

কিশোর ফুটবলার শিহাব উদ্দিনের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও গোলরক্ষক আমিনুল হক। পাশে শিহাবের মা-বাবা ও ছোট ভাই। আলোকদিয়া, সাঁথিয়া, পাবনা, ৭ আগস্ট। ছবি: হাসান মাহমুদ
কিশোর ফুটবলার শিহাব উদ্দিনের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও গোলরক্ষক আমিনুল হক। পাশে শিহাবের মা-বাবা ও ছোট ভাই। আলোকদিয়া, সাঁথিয়া, পাবনা, ৭ আগস্ট। ছবি: হাসান মাহমুদ

২০১৭ সালের দেশসেরা ফুটবলার শিহাব উদ্দিনকে এখন আর ভ্যান চালাতে হবে না। যে পায়ে সে ভ্যান চালিয়ে বাবাকে সংসার চালানোর ব্যাপারে সহায়তা করছিল, সেই পায়ে আবারও ফুটবল খেলার সুযোগ এসেছে। এবার তার বন্ধ হয়ে যাওয়া পড়ালেখা চালু হওয়ারও সুযোগ মিলল।

কিশোর এই ফুটবলারের পাশে এবার এসে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও গোলরক্ষক আমিনুল হক। বুধবার দুপুরে তিনি ঢাকা থেকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামে শিহাবদের বাড়িতে যান। সেখানে তিনি শিহাবের হাতে শিক্ষা অনুদানের টাকা তুলে দেন।

শিহাব যাতে পড়াশোনা ও ফুটবল খেলা চালিয়ে যেতে পারে, এ জন্য আমিনুল ইসলাম তাকে প্রতি মাসে আর্থিক অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন। এই অনুদান প্রতি মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যে শিহাবের কাছে পৌঁছে যাবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। আমিনুল হকের আগে শিহাবের পাশে এসে দাঁড়ায় দেশের নবাগত ফুটবল ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। ক্লাবটি শিহাবের থাকা খাওয়াসহ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেয়।

দেশসেরা কিশোর ফুটবলার এখন ভ্যানচালক’ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইনে সম্প্রতি একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রচারের পর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম আলোকদিয়ার দরিদ্র ভ্যানচালক কোরবান হোসেনের ছেলে শিহাব উদ্দিন। ইছামতী নদীর পাশেই তাদের টিনের একচালা ঘর। প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা শিহাব ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুটবল খেলায় দক্ষতা অর্জন করে। ২০১৭ সালে তার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে সারা দেশে জাতীয় পর্যায়ে রানারআপ হয় সাঁথিয়ার ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয় শিহাব উদ্দিন। সেরা খেলোয়াড় হিসেবে সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কারও গ্রহণ করে। ওই টুর্নামেন্টের আগে তার অধিনায়কত্বেই ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অথচ এর পরেই দারিদ্র্যের কশাঘাতে বন্ধ হয়ে যায় প্রতিভাবান এই খুদে ফুটবলারের ফুটবল খেলা। আলোকদিয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে যায়। এর পরিবর্তে তার হাত ও পা খুঁজে নেয় ভ্যানচালক বাবার ভ্যানের হ্যান্ডেল ও প্যাডেল। সংসার চালাতে বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় শিহাব। তার এই জীবনী নিয়েই প্রথম আলোতে ওই ভিডিওটি প্রকাশিত হয়।

দরিদ্র এই কিশোর ফুটবলারের পাশে এসে দাঁড়ানোর ব্যাপারে সাবেক জাতীয় ফুটবলার আমিনুল হক আগেই প্রথম আলো ও শিহাবের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এই হিসেবে তিনি আগেই জানিয়েছিলেন বুধবার ঢাকা থেকে সরাসরি শিহাবদের বাড়িতে যাবেন। এ জন্য সকাল থেকেই পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার আলোকদিয়ার গ্রামে সবাই অপেক্ষা করছিলেন তাঁকে (আমিনুল হককে) দেখার জন্য। দুপুরের দিকে তিনি আলোদিয়ার উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে পৌঁছান। এরপরই সোজা চলে যান শিহাবদের বাড়িতে।

বাফুফের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রেফারি ও শিহাবের ফুটবল প্রশিক্ষক রাজু আহমেদ বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে শিহাবের জীবনের করুণ গল্পটি উঠে আসায় তাকে প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিয়েছে দেশের অন্যতম ফুটবল ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। আজ তার পড়ালেখা চালু রাখার ব্যাপারে পাশে দাঁড়িয়েছেন সাবেক জাতীয় ফুটবলার আমিনুল হক। আমাদের সবার প্রত্যাশা শিহাব এখন ফুটবলার হওয়ার পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে যাবে এবং একজন শিক্ষিত ফুটবলার হিসেবে গড়ে উঠবে।’

শিহাবের বাবা কোরবান আলী বলেন, ‘ছাওয়ালের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছিলো। বসুন্ধরা কিংস ও আমিনুল ভাইয়ের কারণে ওর স্বপ্ন পূরণ হওয়ার সুযোগ আসিছে।’

আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিডিওটি দেখার পর আমরা যোগাযোগ করে জানতে পারি বসুন্ধরা কিংস শিহাবের ক্লাব প্রশিক্ষণ ও আবাসিক দায়িত্ব নিয়েছে। আমি তাই শিহাবের পড়াশোনার দায়িত্ব নিলাম। আমি চাই সে যেন দেশসেরা ফুটবলার ও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।’ শিহাব বলে, সে দারুণ খুশি। তার ফুটবলার হওয়ার ও পড়াশোনা করার পথে আর কোনো বাধা রইল না।