সিলেটের প্রতীক কিনব্রিজ রক্ষায় সংস্কারের উদ্যোগ

সংস্কারের জন্য ১ সেপ্টেম্বর থেকে যান চলাচল বন্ধ করা হবে কিনব্রিজে। গতকাল বিকেলে। ছবি: প্রথম আলো
সংস্কারের জন্য ১ সেপ্টেম্বর থেকে যান চলাচল বন্ধ করা হবে কিনব্রিজে। গতকাল বিকেলে। ছবি: প্রথম আলো

সিলেট মহানগরকে বিভক্ত করেছে সুরমা নদী। উত্তর ও দক্ষিণপারের বাসিন্দাদের যোগসূত্র তৈরি করতে ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ করা হয়েছিল একটি সেতু। এটি ‘কিনব্রিজ’ হিসেবে পরিচিত। দেশে ও বিদেশে সিলেটের প্রতীকখ্যাত কিনব্রিজ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সংস্কারের জন্য আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করা হচ্ছে।

গত সোমবার রাতে সিলেটে ‘নগর এক্সপ্রেস’ নামের গণপরিবহন চালুর লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কিনব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলবে না শুধু পায়ে হাঁটার জন্য উন্মুক্ত থাকবে, এ সিদ্ধান্তও প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ শেষে নেওয়া হবে বলে মেয়র জানিয়েছেন।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর এই লোহার কাঠামোয় দৃষ্টিনন্দন সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছিল। নির্মাণ শেষে ১৯৩৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় কিনব্রিজ। প্রায় আট দশক ধরে সচল এই সেতুটি মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে সংস্কারকাজ শেষে সচল হয় সেতুটি। তখন এটিই ছিল সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর প্রথম কোনো সেতু। এরপর নব্বই দশকের পর সিলেটে সুরমা নদীর ওপর আরও চারটি সেতু নির্মাণ হয়। কিন্তু কিনব্রিজ নগরের মধ্যভাগে হওয়ায় যানবাহন চলাচল কখনো বন্ধ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এই প্রথম সংস্কারের জন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় আধা কিলোমিটার দীর্ঘ কিনব্রিজের স্থানে স্থানে পিচ, বিটুমিন, বালু, পাথর ও ইটের খোয়া উঠে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। কোথাও কোথাও খানাখন্দ এতই বড় যে সেখানে মাঝেমধ্যে রিকশা ও অটোরিকশা পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। পুরো সেতুটির চলাচলের রাস্তা ব্যবহারের অনেকটা অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সেতুটি সিলেটের একটি প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কিনব্রিজের ছবি দেখামাত্র যে কেউ বলে দিতে পারেন এটি সিলেট। তাই সিলেটের প্রতীকখ্যাত এই সেতুকে রক্ষা করতে হবে। সংস্কারকাজ চলাকালে বিকল্প অন্যান্য সেতু দিয়ে যান চলাচল করবে। পরে প্রকৌশলীদের সিদ্ধান্তের পর যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

কিনব্রিজ রক্ষার স্বার্থে সেতুতে শুধু পায়ে হেঁটে চলাচলের দাবি ছিল বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের। এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘আমিও চাই পায়ে হেঁটে চলাচলের মধ্যে সচল থাকুক সেটি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ শেষে।’

কিনব্রিজ সংস্কারে মেয়রের এ মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ১ সেপ্টেম্বর থেকে কিনব্রিজ দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই দিন থেকে সেতুর সংস্কারকাজ শুরু হবে। কিনব্রিজ দিয়ে যেসব যানবাহন চলাচল করত, সেগুলোকে কিনব্রিজের পশ্চিম দিকে কাজীরবাজার সেতু দিয়ে চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হবে।