কক্সবাজারে বিলীন হচ্ছে ঝাউগাছ

সৈকতে পড়ে আছে জোয়ারের ধাক্কায় উপড়ে যাওয়া ঝাউগাছের গোড়া। গতকাল বিকেলে সৈকতের কবিতা চত্বর পয়েন্টে।  প্রথম আলো
সৈকতে পড়ে আছে জোয়ারের ধাক্কায় উপড়ে যাওয়া ঝাউগাছের গোড়া। গতকাল বিকেলে সৈকতের কবিতা চত্বর পয়েন্টে। প্রথম আলো

অমাবস্যার জোয়ারে বিলীন হচ্ছে কক্সবাজার সৈকতের বালুচরের ঝাউগাছ। গত সাত দিনে অন্তত ১ হাজার গাছ উপড়ে পড়েছে। বিলীন হচ্ছে উপকূল। ইতিমধ্যে সাগরে তলিয়ে গেছে ডায়াবেটিক হাসপাতাল থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার হাঁটার রাস্তা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি ভিত্তিতে ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ হাজার মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ (জিও টিউব) দিয়েও ঝাউগাছ রক্ষা করতে পারছে না। ঢেউয়ের ধাক্কায় জিও টিউব বাঁধও ভেঙে পড়েছে।

গতকাল বুধবার দুপুরে সৈকতের কবিতা চত্বর পয়েন্টের এক কিলোমিটার ঘুরে দেখা গেছে, উত্তাল জোয়ারের ধাক্কায় ঝাউগাছ তলিয়ে যাচ্ছে। উপড়ে পড়ে আছে কমপক্ষে ৫০টি গাছ। আরও ১০ থেকে ১২টি গাছ হেলে আছে। জোয়ারের ধাক্কায় জিও টিউবও ফুটো হয়ে বিভিন্ন অংশে বিলীন হয়েছে।

জেলা প্রশাসন ও উপকূলীয় বন বিভাগের তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২-৭৩ সালে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ডায়াবেটিক হাসপাতাল, লাবণী, কলাতলী, উখিয়ার ইনানী, সোনাপাড়া, টেকনাফের বাহারছড়া, মহেশখালীয়াপাড়া, সাবরাং উপকূলের প্রায় ৫০০ হেক্টর বালিয়াড়িতে সাড়ে ১২ লাখ ঝাউগাছ সৃজন করা হয়েছিল। গত ১০ বছরে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়েছে ৭ লাখের বেশি ঝাউগাছ।

পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়–জলোচ্ছ্বাসে সবুজবেষ্টনী বিশাল ঝাউবাগান হারিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া দুর্বৃত্তরাও প্রতিনিয়ত বাগানের গাছ কেটে নিচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ঝাউবাগান দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ বসতি। জিও টিউব দিয়ে ঝাউবাগান রক্ষা সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার টেকসই শহর রক্ষা বাঁধ।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বলেন, সৈকতের ঝাউবাগান রক্ষা এবং সেখানে আরও বনায়ন সৃজনের নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এখন ঝাউগাছ রক্ষায় পাউবোর জিও টিউব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, বালিয়াড়ির ভাঙন এবং ঝাউবাগান বিলীন ঠেকাতে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ মিটার লম্বা জিও টিউব স্থাপনের জন্য প্রায় ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ইতিমধ্যে ১ হাজার মিটার জিও টিউব স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু জোয়ারের ধাক্কায় জিও টিউবের কয়েকটি অংশ ফুটো হয়ে বিলীন হয়েছে।