উড়ালসড়কে দুই মিনিটে ভুলতা পার!

যানজটের ভোগান্তি ছাড়াই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা উড়ালসড়ক দিয়ে চলছে যানবাহন। ভুলতা উড়াল সড়ক পার হতে গাড়িগুলোর সময় লাগছে দেড় থেকে দুই মিনিট। ছবি: প্রথম আলো
যানজটের ভোগান্তি ছাড়াই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা উড়ালসড়ক দিয়ে চলছে যানবাহন। ভুলতা উড়াল সড়ক পার হতে গাড়িগুলোর সময় লাগছে দেড় থেকে দুই মিনিট। ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রতিদিন যানজট লেগে থাকত। প্রায় এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হতো কয়েক ঘণ্টা। গতকাল শুক্রবার থেকে ভুলতা উড়ালসড়ক খুলে দেওয়ায় দুই মিনিটের কম সময়ে গাড়িগুলো ভুলতার অংশ যানজট ছাড়াই পাড়ি দিচ্ছে। এ অংশে যানজটের ভোগান্তি ছাড়াই ঈদে ঘরমুখী মানুষ বাড়ি ফিরছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় ও গোলাকান্দাইল দিয়ে ঢাকা-বাইপাস সড়কের সংযোগ স্থল। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন দেশের উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার মালবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। এ ছাড়া দেশের পাইকারি কাপড়ের মার্কেট গাউছিয়া রয়েছে ভুলতায়। কাপড়ের ব্যবসায়ীরা এখানে এসে কাপড় কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। এ কারণে ভুলতায় ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেশি। এসব কারণে ভুলতায় প্রতিদিন যানজট সৃষ্টি হয়। এ মহাসড়কের ভুলতার অংশের যানজট ভুলতা ছাড়িয়ে কাঁচপুর হয়ে অন্যদিকে আড়াইহাজার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ভোগান্তি পোহাতে হয় বিভিন্ন পরিবহনচালক ও যাত্রীদের।

যানজট নিরসনে ২০১৫ সালের অক্টোবরে ভুলতায় উড়ালসড়ক নির্মাণকাজ শুরু করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। দীর্ঘদিন কাজ শেষে গতকাল সকাল থেকে ভুলতা উড়ালসড়কটি ঈদে ঘুরমুখী মানুষের ভোগান্তি এড়াতে খুলে দেওয়া হয়। উড়ালসড়ক খুলে দেওয়ায় পাল্টে গেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের এই স্থানের চিরচেনা যানজটের দৃশ্য।

আজ শনিবার সকালে এই মহাসড়কের গাড়িগুলো কোনো যানজট ছাড়াই দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যেতে পারছে। ফলে, যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি মেলে যাত্রী ও পরিবহনচালকদের। ভুলতা উড়ালসড়ক ছিল ফাঁকা। অনেকক্ষণ পরপর একটি–দুটি গাড়ি দেখা গেছে।

ভুলতা হাজী শপিং কমপ্লেক্সের বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলজার হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ভুলতার উড়ালসড়ক চালু হওয়ায় এখন একেবারে যানজট নেই। ভুলতা এলাকা যানজটমুক্ত। তিনি বলেন, আগে যদি রাতে যানজট লাগত, সেই যানজট সারা দিনেও শেষ হতো না। উড়ালসড়ক হওয়াতে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে ঈদে ঘরমুখী মানুষ।

প্রতিদিন এই সড়কে যাতায়াতকারী কাপড় ব্যবসায়ী বাদশা খালেদ অপু বলেন, ‘আগে ভুলতার মোড় পার হতে যানজটের কারণে অনেক সময় লাগত। কখনো কখনো চার থেকে পাঁচ ঘণ্টাও গাড়িতে বসে থাকতে হয়েছে। গাউছিয়ার মঙ্গলবারের হাটের কারণে ওই দিন ছাড়াও হাটের আগের দিন সোমবার ও পরদিন বুধবার পর্যন্ত ভয়াবহ যানজট হতো। এখন উড়ালসড়ক চালু হওয়ায় সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন মিনিটে ভুলতার অংশ পার হচ্ছি।’

তিশা পরিবহনের শিমরাইল কাউন্টারের ব্যবস্থাপক তারা মিয়া বলেন, ভুলতায় এই রুটের গাড়িগুলো যানজটের কবলে পড়ত। উড়ালসড়ক খুলে দেওয়ায় এখন যানজটে পড়তে হয় না। দ্রুতগতিতে গাড়িগুলো গন্তব্যের উদ্দেশে চলে যেতে পারছে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মোল্লা তাসলিম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এই পয়েন্টে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকত। এই অংশের যানজট ছড়িয়ে পড়ত আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। এই যানজট নিরসন করতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগত। ভুলতা উড়ালসড়ক খুলে দেওয়ায় এখন একটি গাড়ি পার হতে দুই থেকে চার মিনিট সময় লাগছে। স্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরছে ঘরমুখী মানুষ। এখন এই মহাসড়কে যানজট নেই, মহাসড়ক অনেকাংশে ফাঁকা।

এ বিষয়ে ভুলতা উড়ালসড়কের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল সালেহ মো. নুরুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, গাড়িগুলো দেড় থেকে দুই মিনিট সময়ে ভুলতা উড়ালসড়ক পাড়ি দিতে পারছে।