'নৈরাজ্য চলছে সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথে'

আজ শনিবার দুপুরে ঈদযাত্রা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ছবি: প্রথম আলো
আজ শনিবার দুপুরে ঈদযাত্রা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ছবি: প্রথম আলো

সড়কপথে অব্যবস্থাপনায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে ঈদে ঘরমুখী মানুষদের। ফিটনেসবিহীন ট্রাকে পশু বহন, ফিটনেসবিহীন বাসে যাত্রী পরিবহনে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। রেলপথে টিকিট কালোবাজারি, ছাদে যাত্রী ও শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে ঘরমুখী যাত্রীরা। নৌপথে চলছে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। ফেরিঘাটগুলোয় বসে থাকতে হচ্ছে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা। আর আকাশপথে ৪ থেকে ৫ গুণ বাড়তি দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে।

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে ঈদযাত্রা নিয়ে এসব অভিযোগ করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘হয়রানিমুক্ত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা নিশ্চিত করুন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন করে তারা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার কারণে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন থেমে থেমে চলছে। পথে পথে পশুবাহী ট্রাক থামিয়ে পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি চলছে। এসব চাঁদাবাজিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে কৃত্রিম যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌ-রুটে ফেরিতে পার হতে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। দুর্ভোগ মাথায় করে প্রতিটি লঞ্চে ধারণক্ষমতার প্রায় তিন থেকে চার গুণ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, সব পথে ভাড়া–ডাকাতি চলছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে সীমিত পরিসরে সড়ক, নৌ ও রেলপথে মনিটরিং টিমের কার্যক্রম থাকলেও আকাশপথে ভাড়াসংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম নেই। ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলসহ ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী প্রতিটি রুটে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ ভাড়া বেশি আদায় করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা রুটে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে, এই ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি ৫ লাখ যাত্রী অন্য জেলায় যাতায়াত করবে। আর দেশব্যাপী এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাতায়াত করবে আরও ৩ কোটি ৫০ লাখ যাত্রী। এবারের ঈদযাত্রার ১২ দিনে ৪ কোটি ৫৫ লাখ যাত্রী ২৭ কোটি যাত্রাবহরের সঙ্গে থাকবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই সরকারের আমলে গত ১১ বছরে ২২টা ঈদ এসেছে। অথচ প্রতিবছর আমাদের একই প্রশ্ন তুলতে হয়। সারা বছর তো আর এত মানুষ একসঙ্গে যাতায়াত করে না। করে শুধু দুই ঈদে। কিন্তু সে ব্যবস্থাপনা কোথায়?’

জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকারের কাজ পরিকল্পনা নিয়ে এর ব্যবস্থাপনা করা। পরিবহন খাতে কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এটাকে ঢেলে সাজাতে হবে। রাস্তাকে দখলমুক্ত রেখে ব্যবহার উপযোগী করা দরকার, সেটা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু সরকার এখানে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিদিন ব্যর্থ হচ্ছে।

গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি আব্দুল হক বলেন, ‘দেশের গণপরিবহন খাতে এখন কৃত্রিমভাবে যানজট তৈরি করা হচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশ থাকা সত্ত্বেও মহাসড়কে বাস-ট্রাক আটকে রেখে চাঁদাবাজি হচ্ছে। এটা সরকারের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে, পথে মানুষের মৃত্যু বাড়ছে। এর মতো ভয়াবহ অবস্থা কোনো সভ্য জনগোষ্ঠীতে হতে পারে না।’

নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা এ বিষয় নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু সরকার আমাদের কথা শুনছে না। সড়কে সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। সরকারের কর্তৃপক্ষগুলো এসবে নজর দিচ্ছে না, পুরো ব্যবস্থাটাই একটা নৈরাজ্যের মধ্যে আছে। অথচ সরকার এদিকে নজর দিচ্ছে না। যোগাযোগমন্ত্রী সমস্ত বিষয়ে কথা বলেন, কিন্তু যাত্রী হয়রানি ও নৈরাজ্য নিয়ে কথা বলেন না।’

যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তাওহীদুল হক বলেন, এবারের ঈদে ছুটি কম। যাত্রী কল্যাণ সমিতির সুপারিশ ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সরকার পরিবহন খাতকে সাজানোর ব্যবস্থা নেবেন বলে তাঁর আশা।

সড়ক, নৌ ও আকাশপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা, পশুবাহী ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধ, সড়ক-মহাসড়কের ওপর বসা পশুর হাট-বাজার উচ্ছেদ করা, নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করাসহ ১১টি সুপারিশ দিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।