নতুন ওয়ার্ডে ঝুঁকি বেশি, মশা মারা হচ্ছে না

জমে থাকা পানিতে মশার বিস্তার হচ্ছে। সম্প্রতি শ্যামপুর এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
জমে থাকা পানিতে মশার বিস্তার হচ্ছে। সম্প্রতি শ্যামপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

নগরে ডেঙ্গু–আতঙ্কের মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে মশকনিধনে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। এসব এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, নির্মাণকাজ এবং জলাশয় বেশি থাকায় এসব এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ে ঝুঁকিও বেশি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।

নতুন যুক্ত হওয়া এসব ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ব্যক্তি ও সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন নির্মাণকাজ চলছে। সড়ক, নর্দমা, পানিনিষ্কাশন নালা তৈরি হচ্ছে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে। পাশাপাশি অসংখ্য বহতল ভবন নির্মিত হচ্ছে ব্যক্তি উদ্যোগে। এসব নির্মাণকাজের স্থানে জমে থাকা পানিতে এডিসসহ অন্য মশা জন্মে। এ ছাড়া খাল-বিল ও বিভিন্ন জলাশয় থেকেই মশার বিস্তার হচ্ছে। অনেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু মশা নিধনে সিটি করপোরেশন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

২০১৭ সালের জুলাইতে বাড্ডা, ভাটারা, সাতারকুল, বেরাইদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়নকে ১৮টি ওয়ার্ডে ভাগ করে উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) যুক্ত করা হয়। আর শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ ইউনিয়নকে ১৮টি ওয়ার্ডে ভেঙে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) যুক্ত করা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে এসব ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হয়েছে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, এসব ওয়ার্ডে মশকনিধনে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির কোনো কার্যক্রম নেই। মশা মারার জন্য ওষুধ, জনবল ও যন্ত্রপাতিও নেই।

শনির আখড়ার মৃধাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সাইফুল মৃধা বলেন, সমালোচনার মুখে পুরোনো ওয়ার্ডগুলোতে মশকনিধনে কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করছে সিটি করপোরেশন। সকালে-বিকেলে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডে কর্তৃপক্ষের কোনো দৃষ্টি নেই। তিনি বলেন, শুধু কাগজে-কলমেই তাঁরা সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু সেবার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই অবহেলার শিকার হচ্ছেন। 

মোহাম্মদবাগ, মেরাজনগর, পূর্ব কদমতলী নিয়ে ডিএসসিসির নবগঠিত ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মেরাজনগরের একটি চায়ের দোকানে বসে স্থানীয় বাসিন্দা লিয়াকত হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, রাজধানীর অন্য অনেক এলাকার তুলনায় এই এলাকাগুলো নিম্নাঞ্চল। খাল-নালায় সারা বছরই পানি জমে থাকে। এখানে প্রচুর মশা জন্মায়। দিনের বেলায়ও বাসার দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। কিন্তু এই এলাকায় সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটায় না।

>নতুন ওয়ার্ডে মশকনিধনে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির তেমন কোনো কার্যক্রম নেই
মশা মারার জন্য ওষুধ, জনবলও যন্ত্রপাতিও নেই


ডিএসসিসির ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক বলেন, ‘এডিস মশার উপদ্রব বাড়ায় নিজ উদ্যোগে নবাবপুর থেকে মশার ওষুধ কিনে এলাকায় সকাল-বিকেল ছিটাচ্ছি। সাতজন লোক সব সময় মশকনিধনে কাজ করছেন। কিন্তু ব্যক্তি উদ্যোগে আর কতটুকুই–বা করা যায়?’

শনির আখড়া-মৃধাবাড়ি খাল মশার অন্যতম প্রজননস্থল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সরেজমিনে দেখা যায়, খালে কালচে পানিতে কচুরিপানাসহ বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা জমে রয়েছে। এর ওপর মশা উড়ছে। শনির আখড়া কাঁচাবাজার এলাকার বাসিন্দা আরিয়ান আবির বলেন, এই খালে পানির প্রবাহ নেই। ফলে খালের পানি পচে কালো হয়ে আছে। বিকেল ঘনিয়ে আসতেই এই খাল থেকে মশার ঝাঁক উড়ে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়তে হয়।

ডিএসসিসির ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘মশার উপদ্রবের জন্য জনগণের কাছে প্রতিনিয়ত জবাবদিহি করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে পাঁচটি ফগার মেশিন কিনেছি। লোক নিয়োগ করে তাঁদের দিয়ে ওষুধ ছিটাই। কিন্তু এই এলাকায় নির্মাণাধীন অনেক বাড়ি রয়েছে। এসব বাড়িতে প্রচুর মশা রয়েছে।’ সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা ছাড়া এসব মশা সম্পূর্ণ নিধন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় ঘনবসতি হলেও আশপাশের এলাকাগুলো ফাঁকা। অনেকটা গ্রামের মতো। খাল-বিল কিংবা জলাশয়—সবই রয়েছে। এর মধ্যে এলাকাটিতে নতুন নতুন বহুতল ভবন গড়ে উঠছে। কিন্তু এই এলাকায় কখনোই মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেননি স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দা আলাউদ্দিন কবির।

একই অবস্থা উত্তরেও। উত্তরখান ডিএনসিসির ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। সেখানে আদর্শপাড়ার বাসিন্দা রিয়াজুল জান্না গত ১৫ জুলাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বেশ কিছুদিন হাসপাতালে কাটিয়ে সম্প্রতি বাসায় ফিরেছেন। রিয়াজুল বলেন, এই এলাকার অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু মশকনিধনের কোনো কার্যক্রম চলছে না। ওষুধ ছিটানো হয় না বহুদিন ধরে। দক্ষিণখান এলাকায়ও সিটি করপোরেশনের মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায় না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম।

তবে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমানের দাবি, নতুন ওয়ার্ডগুলোতে তিন মাস ধরেই মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এই কাজ তদারক করার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০ জন করে জনবল রয়েছে। তবে কোন ওয়ার্ডে কতজন জনবল বা মশার ওষুধ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করে বলতে পারেনি ডিএনসিসি।

ঈদুল আজহার পরপর অল্প পরিসরে কার্যক্রম চালু করার কথা জানিয়েছে ডিএসসিসি। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নতুন ওয়ার্ডগুলো মাস ছয়েক আগে ডিএসসিসি বুঝে পেয়েছে। ফলে গত অর্থবছরে এই ওয়ার্ডগুলোর জন্য মশক খাতে বরাদ্দ রাখা যায়নি। এবারের বাজেটে নতুন ওয়ার্ডগুলোতে মশক খাতে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হবে।