ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ আদায়

দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মাঠ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার নামাজ শান্তিপূর্ণভাবে আদায় হয়েছে। ছবি: তাফসিলুল আজিজ
দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মাঠ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার নামাজ শান্তিপূর্ণভাবে আদায় হয়েছে। ছবি: তাফসিলুল আজিজ

দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মাঠ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার নামাজ শান্তিপূর্ণভাবে আদায় হয়েছে। বিশ্বের সব মানুষের শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে। এবার ১৯২তম ঈদুল আজহার নামাজের ইমামতি করেন কিশোরগঞ্জ শহরের মারকাজ মসজিদের খতিব মাওলানা হিফজুর রহমান খান।

আজ সোমবার সকালে দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মুসল্লি দলে দলে শোলাকিয়া বড় ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করতে আসেন। কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং আবহাওয়া ভালো থাকায় তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন।

এ মাঠের ঐতিহ্য ও রেওয়াজ অনুযায়ী নামাজ শুরুর ১৫ মিনিট আগে নামাজের প্রস্তুতির সংকেত হিসেবে বন্দুকের তিনটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ। এরপর পুলিশের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নামাজ শুরুর ১০ মিনিট আগে দুটি ও পাঁচ মিনিট আগে একটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। মুসল্লিরা নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করে ঘরে ফেরায় স্বস্তি প্রকাশ করেন পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান।

ঈদের জামাত নির্বিঘ্ন করতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও জেলা পুলিশসহ অসংখ্য নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। মাঠের ভেতর-বাইরে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাসহ আটটি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পুরো মাঠের মুসল্লিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়।

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, মুসল্লিদের বাড়তি নিরাপত্তায় প্রশাসন থেকে এবার সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। ২০১৬ সালের ঈদুল ফিতরে শোলাকিয়া মাঠের পাশে বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার কারণে নিরাপত্তা জোরদারে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

প্রতিবছর ঈদে দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির সমাগম হয় এ মাঠে। ১৮২৮ সালে এ মাঠে প্রথম বড় জামাতে একসঙ্গে সোয়া লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই সোয়া লাখ থেকে ঈদগাহ মাঠের নামকরণ হয় শোলাকিয়া।

২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন নামাজ শুরুর আগ মুহূর্তে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের অদূরে আজিমউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের কাছে পুলিশের তল্লাশির সময় জঙ্গিরা গ্রেনেড হামলা করে। জঙ্গিদের চাপাতির কোপে দুই পুলিশ কনস্টেবল আনছারুল হক ও জহিরুল ইসলাম মারা যান। এ সময় ১২ পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ঘটনাস্থলে সন্দেহভাজন জঙ্গি আবির রহমান মারা যান। দুই পক্ষের ‘গোলাগুলির’ মধ্যে নিজ বাসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এলাকার গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিক। আটক করা হয় সন্দেহভাজন আরেক জঙ্গি শফিউলকে। ওই বছরের ৪ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার ডাংরি এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে এক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শফিউল নিহত হন।