ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শক সিনড্রোমে এবার বেশি মৃত্যু

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শক সিনড্রোমে এবার বেশি মৃত্যু হচ্ছে। এ পর্যন্ত যাদের মৃত্যু হয়েছে, ৬৮ শতাংশেরই ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ছিল। এই তথ্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের লক্ষণ হচ্ছে রক্তক্ষরণ ও শরীরের পানিশূন্যতার কারণে রোগী অচেতন হয়ে পড়া।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি এ পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে।

কমিটি পর্যালোচনায় দেখেছে, এই ৪০ জনের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরে। এতে শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়।

গত বছর ডেঙ্গুতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে। আর ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরে। পরিসংখ্যান বলছে, বেশির ভাগ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর প্রধান কারণের ধরন বদলেছে। গত বছর প্রধান কারণ ছিল ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর, এবার ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। 

তুলনামূলকভাবে কেন রোগীদের মধ্যে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বেশি দেখা যাচ্ছে, তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না। আইইডিসিআর বলছে, এবার ডেঙ্গু ভাইরাস ডেনভি-৩-এর প্রকোপ বেশি। এর উপসর্গ ও জটিলতা অনেক বেশি মারাত্মক।

ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন বা সেরোটাইপ আছে: ডেনভি-১, ডেনভি-২, ডেনভি-৩ ও ডেনভি-৪। 

প্রাথমিকভাবে এক রকমের সেরোটাইপ দিয়ে সংক্রমিত হলে শরীরে জীবনব্যাপী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। পরে অন্য সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হলে ডেঙ্গু হেমোরোজিক জ্বর বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়। আইইডিসিআর তাদের ডেঙ্গুবিষয়ক নিউজ লেটারে বলেছে, এই বিষয়টি পরিষ্কার নয় যে কেন কিছু সেরোটাইপের ভিন্নতা অন্যগুলোর চেয়ে এত বেশি মারাত্মক।

>সর্বশেষ জাতীয় ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা অনুসরণ করে রোগীর চিকিৎসা দিতে আইইডিসিআরের জোর পরামর্শ।

মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটির নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে, এরা হাসপাতালে এসেছে প্রায় শেষ সময়ে।

আইইডিসিআরের মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি ৪০টির মধ্যে ২৯টি মৃত্যুর সব ধরনের কাগজপত্র পেয়েছে। তাতে তারা দেখেছে, এদের মধ্যে ১৭ জন দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল। 

এই পরিস্থিতিতে আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে, তাঁরা যেন সর্বশেষ জাতীয় ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা অনুসরণ করে রোগীর চিকিৎসা দেন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘রোগীর শরীরের তরল ব্যবস্থাপনা (ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট) জটিল বিষয়। এটা কীভাবে করতে হবে তা নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে বলা আছে। সে জন্য নির্দেশিকা ব্যবহারের ওপর আমরা জোর দিচ্ছি।’

চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেঙ্গু জ্বরে বুকে-পেটে পানি জমে, ফুসফুসে পানি জমে শ্বাসকষ্ট হয়। প্রথম থেকে ঠিকমতো চিকিৎসা করালে এবং সঠিক পরিমাপে তরল পদার্থ দিতে পারলে ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করে না। 

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়গুলো নির্দেশিকার সর্বশেষ সংস্করণে আছে। এ বিষয়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কাজের সময় হাতের কাছে রাখার জন্য ‘পকেট গাইডলাইন’ তৈরি করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসি অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ ২০০০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এবার কিছু রোগীর অবস্থা খুব দ্রুতই খারাপ হতে দেখা যাচ্ছে। এর একটা কারণ হয়তো এই যে এবার ডেঙ্গুতে দ্বিতীয়বার আক্রান্তের সংখ্যা হয়তো অনেক বেশি।