এক বছরেও সরকারি হয়নি শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি

প্রতিষ্ঠান সরকারি হওয়ার পর এক বছর পার হলেও দেশের ৩০১টি কলেজের কমবেশি প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি এখনো সরকারি হয়নি। যাচাইয়ের কাজ শেষ না হওয়ার কারণে তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। দেরি হওয়ায় সুবিধাবঞ্চিত হয়েই অনেক শিক্ষককে অবসরে যেতে হচ্ছে।

সরকারি হওয়া এসব কলেজের শিক্ষকেরা চাচ্ছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন তাঁদের সরকারি করা হয়। অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরাও সেই চেষ্টা করছেন। কিন্তু যাচাইয়ে দেখা যাচ্ছে, বেসরকারি থেকে সরকারি হওয়া এসব কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি বড় অংশের নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ঘাটতি রয়েছে। 

 শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, অনেক শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে যাচ্ছেন—এই তথ্য তিনিও পেয়েছেন। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব এসব কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি করার কাজটি শেষ করার চেষ্টা চলছে। 

দেশের যেসব উপজেলায় কোনো সরকারি কলেজ ছিল না, সেগুলোতে একটি করে কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে
প্রক্রিয়া শুরু হলেও চূড়ান্তভাবে গত বছরের ১২ আগস্ট দেশের ২৭১টি বেসরকারি কলেজকে জাতীয়করণ করা হয়। এর আগে-পরে আরও ৩০টি কলেজ জাতীয়করণ হয়। মাউশির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এসব কলেজে শিক্ষক ও কর্মচারী আছেন কমবেশি প্রায় ১৬ হাজার। এর মধ্যে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষক। 

নিয়মানুযায়ী কলেজ সরকারি ঘোষণার পর কলেজে বৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক ও কর্মচারীদের শিক্ষা, জনপ্রশাসন এবং সরকারি কর্ম কমিশনসহ (পিএসসি) সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তরের প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিতে হয়। 

সরকারি করার জন্য এসব কলেজের শিক্ষকদের তথ্য যাচাই করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর কাজটি করছে মাউশি। অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন তিনটি কলেজ করে মোট ১০০ দিনের মধ্যে সবগুলো কলেজের তথ্য যাচাইয়ের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ২১ জন কর্মকর্তাকে শুধু এই কাজের জন্য যুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১২৬টি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টির তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কাজটি করতে গিয়ে তাঁরা দেখছেন, প্রায় ২০ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ঘাটতি রয়েছে। এসব কাগজ পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও অনেকে দিতে পারছেন না। এসব কাগজপত্র ছাড়া সরকারি করাও কঠিন। 

মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবীর প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন মন্ত্রণালয়ে যেন একেবারে নির্ভুলভাবে কাগজগুলো যায়। আশা করছেন তাঁদের পর্যায়ের কাজটি সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। 

 সরকারি হওয়া কলেজের শিক্ষকদের দাবি, অনেকে ২০–২৫ বছর আগে নিয়োগ পেয়েছেন নিয়ম মেনেই। এই দীর্ঘ সময়ে কিছু কাগজপত্র হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট হওয়া অসম্ভব নয়। তাই বাস্তবতা বিবেচনা করে কাজটি দ্রুত শেষ করা উচিত। 

নিয়মানুযায়ী চাকরিতে থাকা শিক্ষকেরাই কেবল সরকারি সুবিধা পাবেন। কিন্তু জাতীয়করণ হওয়া এসব কলেজের শিক্ষকেরা নিয়মিত অবসরে
যাচ্ছেন। গত বছরের আগস্ট থেকে গত জুন পর্যন্ত ৩৩৮ জন শিক্ষক অবসরে গেছেন। আর আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ১৬৯ জন শিক্ষক অবসরে যাবেন। কিন্তু সরকারি না হওয়ায় সরকারি সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। অবশ্য এখন কেবল এসব কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা আগের মতো শুধু মূল বেতনটি পাচ্ছেন। 

জাতীয়করণ হওয়া কলেজগুলোর শিক্ষকদের সংগঠন সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এখন একটাই চাওয়া, সমন্বিতভাবে দ্রুত পদ সৃষ্টি করে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি যেন সরকারি করা হয়।’