ডেঙ্গু ওয়ার্ডে তালা

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল সকালে লালবাগের ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালে এসেছে দুটি শিশু। তাদের রাখা হয়েছে তৃতীয় তলার ৩০৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝেতে মশারি টানিয়ে। অথচ একই তলায় রয়েছে ডেঙ্গু ওয়ার্ড। সেখানে বন্ধ দরজায় ঝুলছে তালা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবলের অভাবে তারা হিমশিম খাচ্ছে। ডেঙ্গু পরীক্ষার বেশ কিছু সরঞ্জাম রয়েছে হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে গতকাল শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, ৪৫ শয্যার এ হাসপাতালের ভেতরটা বেশ নিরিবিলি। তৃতীয় তলার একটি কক্ষের দরজায় লেখা ‘ডেঙ্গু ওয়ার্ড’। তবে সেটির দরজায় একটি তালা ঝুলছে। হাসপাতালে প্যাথলজি, রেডিওলজি বিভাগ বন্ধ। তৃতীয় তলার শৌচাগারগুলো বেশ নোংরা। হাসপাতালজুড়েই দুর্গন্ধ।

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জনবলের কমতি আছে। হাসপাতালটিতে মাত্র আটজন চিকিৎসক কর্মরত। তাঁরাই বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ সামলান। রোগীদের সামাল দিতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন। আলাদা করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি করা হলে সেখানে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হলেও তা বন্ধ রাখা হয়েছে। কোনো ডেঙ্গু রোগী এলে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালের অন্তর্বিভাগের ৩০৯ নম্বর ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে গতকাল সকালে ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালে আসেন কসাইটুলির বাসিন্দা আতাউর রহমান। পাঁচ দিন ধরে তাঁর ছেলের জ্বর। একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা করে জানতে পেরেছেন, ছেলের ডেঙ্গু হয়েছে। আতাউর বলেন, মহানগর শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁর ছেলেকে দেখেছেন। কাল (আজ) সকালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসবেন। তখন ছেলের পরবর্তী চিকিৎসা শুরু হবে। হাসপাতালটি বেশ নোংরা। দুর্গন্ধে থাকা যাচ্ছে না।

>মহানগর শিশু হাসপাতাল
হাসপাতালে প্যাথলজি, রেডিওলজি বিভাগ বন্ধ
তৃতীয় তলার শৌচাগারগুলো বেশ নোংরা। হাসপাতালজুড়েই দুর্গন্ধ


হাসপাতালটির অন্য ওয়ার্ডের রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে এ হাসপাতালে দিনে একবার হলেও মশার ওষুধ দেন। তারপরও মশার উপদ্রব আছে। রাতের বেলায় তাঁরা মশারি ব্যবহার করেন। কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী বাইরের দোকান থেকে মশার কয়েল কিনে আনেন।

৩১০ নম্বর ওয়ার্ডের এক রোগীর আত্মীয় মো. আমিরুল বলেন, ‘এই হাসপাতালে ময়লা নেই। তবে অনেক দুর্গন্ধ। সবচেয়ে বেশি গন্ধ হাসপাতালের বাথরুমে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কী পরিষ্কার করে কে জানে? বাথরুমে তো যাওয়াই যায় না।’

হাসপাতালটির পরিচালক মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, ডেঙ্গু রোগ মোকাবিলায় জাতীয় ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ থেকে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে দুবার পালা করে হাসপাতালে মশার ওষুধ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগের পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে কোনো শিশু এলে তাকে প্রাথমিকভাবে এনএস১ পরীক্ষা করানো হয়। তারপর পরীক্ষায় রোগ ধরা পড়লে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়।’

জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার সুমাইয়া হোসেন বলেন, এবারের ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোনো শিশু ডেঙ্গু জ্বরের কারণে মারা যায়নি। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের অবস্থার অবনতি হলে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।