যশোরে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে জাল দলিল

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ক্ষিতীশ চন্দ্র হালদার নামের এক জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে জাল দলিল করা হয়েছে। উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নকল করে ভুয়া ওয়ারিশান সনদ তৈরির মাধ্যমে ওই জাল দলিল নিবন্ধন করা হয়েছে।

ক্ষিতীশ চন্দ্র হালদার উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিভাগদী গ্রামের বাসিন্দা।

ওই জাল দলিল বাতিল এবং জাল দলিল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ক্ষিতীশ চন্দ্র হালদারের ভাই অমিতাভ হালদার গত ২৪ জুলাই জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ক্ষিতীশ চন্দ্র হালদার এখনো জীবিত আছেন। তাঁর তিন ছেলে রয়েছেন। তাঁরা হলেন সরবিন্দু কুমার হালদার, গোবিন্দ কুমার হালদার ও প্রদীপ কুমার হালদার। মেজ ছেলে গোবিন্দ কুমার দলিল লেখক আকবর হোসেন ও গ্রহীতা বাচ্চু মোল্যাকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষিতীশ চন্দ্র হালদারকে মৃত দেখিয়ে অন্য দুই ভাইকে বাদ দিয়ে নিজেকে একমাত্র সন্তান দাবি করে ইউপির চেয়ারম্যান বাবুল আক্তারের স্বাক্ষর জাল করে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর একটি ভুয়া ওয়ারিশান সনদ তৈরি করেন। এরপর পার্শ্ববর্তী ভাটপাড়া গ্রামের আবদুল মোল্যার ছেলে বাচ্চু মোল্যার কাছে বিভাগদী কন্দনপুর মৌজার ৪২৬ নম্বর খতিয়ানের ১২৭০ দাগের ২৫ শতক বাস্তুজমি ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা দাম দেখিয়ে বিক্রি করেন। গত বছরের ৮ নভেম্বর নওয়াপাড়া সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ে দলিল নিবন্ধন করা হয়। দলিল নম্বর ৫৯৫১/১৮। জমির দাতা গোবিন্দ কুমার হালদার, গ্রহীতা বাচ্চু মোল্যা এবং দলিল লেখক আকবর হোসেন একই এলাকার বাসিন্দা এবং তাঁরা পরস্পর পরিচিত। তাঁরা যোগসাজশে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নকল করে ভুয়া ওয়ারিশান সনদ তৈরি করে এই জাল দলিল করেছেন বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভূমি নিবন্ধন আইন অনুসারে বিক্রেতা জমির ক্রয়সূত্রে মালিক হলে দলিল নিবন্ধনের সময় তাঁকে নামজারি সনদ দিতে হয়। আর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রেতার ইউপি চেয়ারম্যান প্রদত্ত ওয়ারিশান সনদ দিতে হয়।

বাঘুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি লিখিত প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। প্রত্যয়নপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ক্ষিতীশ চন্দ্র জীবিত। তাঁর আরও দুই ছেলে রয়েছেন। গত ১ নভেম্বর দেওয়া ওয়ারিশান সনদ তাঁর নয়। এটি সম্পূর্ণ জাল ও ভিত্তিহীন।

ক্ষিতীশ চন্দ্র হালদার জীবিত বলে তাঁর প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করেছেন বাঘুটিয়া ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মান্নান মোড়ল। তিনি বলেন, ‘ক্ষিতীশ চন্দ্র হালদার আমার ওয়ার্ডের একজন স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি এখনো বেঁচে আছেন।’

দলিল লেখক আকবর হোসেন বলেন, ‘দাতা চেয়ারম্যানের ওয়ারিশান সনদ দিয়েছেন। সেই অনুসারে আমি দলিল করেছি। আমি জানতাম না দাতার ওয়ারিশান সনদ ভুয়া।’

যশোর জেলা রেজিস্ট্রার মো. শাহজাহান সরদার বলেন, ‘ওয়ারিশান সনদ তৈরি করে জাল দলিল করার একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’