পরের তেলে পটোল ভাজল পুলিশ

ছেলের মামলার হাজিরা রয়েছে। তাই মা বাড়ি থেকে ছেলের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলেন। ওই মায়ের ভাষ্য অনুযায়ী, পুলিশকে ৬০০ টাকা দিয়ে তিনি হাজতখানার ভেতরে গিয়ে খাবার নিয়ে ছেলের পাশে বসেছিলেন। সঙ্গে তাঁর নাতিও ছিল। তাঁর ছেলের হাতে স্মার্টফোনও দেখা গেল। এ প্রতিবেদক ঘটনাটি দেখে ফেলায় ওই মাকে আরও ৫০০ টাকা গুনতে হয়। সাংবাদিককে ‘ম্যানেজ’ করার নামে দ্বিতীয় দফায় টাকাটা নেয় পুলিশ। গতকাল রোববার রাজশাহী জেলা আদালতে হাজিরা দিতে আসা আসামিদের হাজতখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে।

হাজতিদের আদালতে হাজিরা দিতে আসার সময় কারাগার থেকে চিড়া ও গুড় দেওয়া হয়। হাজতিদের অভিযোগ, বিস্বাদ এই চিড়া চিবানো যায় না। এর সত্যতা যাচাই করতে গতকাল এ প্রতিবেদক রাজশাহী জেলা হাজতখানায় যান। সঙ্গে স্থানীয় একজন সাংবাদিকও ছিলেন। রাজশাহী জেলা আদালত পরিদর্শকের অনুমতি নিয়ে চিড়ার স্বাদ পরীক্ষা করতে যাওয়া হয়। তখন বেলা প্রায় সোয়া ১১টা। কথা শুনে সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা বললেন, সব আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এখানে শুধু একজন আসামি আছেন। তিনি সরাসরি থানা থেকে এসেছেন। তাঁর কাছে কারাগারের চিড়া-গুড় নেই। এ সময় একজন বলে ওঠেন, পাশের কক্ষে একজন কারাগারের হাজতি আছেন। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল, ওই কক্ষে একজন নারী একটি বাচ্চাকে নিয়ে আসামির পাশে বসে রয়েছেন। আসামি আধশোয়া হয়ে মুঠোফোনে ব্যস্ত।

ওই আসামি তাঁকে দেওয়া চিড়া-গুড় দেখালেন। পলিথিনের একটি ব্যাগে খানিকটা চিড়ার সঙ্গে সামান্য একটু গুড়। তিনি বললেন, এই চিড়া একেবারে বিস্বাদ। চিবানো যায় না। তিনি একটু চিড়া মুখে দিয়ে পরীক্ষা করার জন্য অনুরোধ জানালেন। মুখে দিয়ে দেখা গেল, চিড়ার প্রকৃত স্বাদ নেই। অনেকক্ষণ মুখটা তেতো হয়ে থাকল। এরপর সেখান থেকে চলে আসতে চাইলেও টি-শার্ট পরা এক পুলিশ সদস্য এ প্রতিবেদককে ঘিরে ধরেন। তিনি বারবার বলতে থাকেন, স্যার (আদালত পরিদর্শক) ফোন করেছিলেন। তাঁর ডান হাতের মধ্যে ভাঁজ করা একটি নোট। ওই নোটটা প্রতিবেদকের হাতে গুঁজে দেওয়ার জন্য তিনি প্রায় যুদ্ধ শুরু করলেন। একপর্যায়ে তাঁকে বুঝিয়ে বলা হয়, তাঁদের কোনো দুর্নীতি ধরার জন্য এখানে আসেননি এ প্রতিবেদক। অনেক বুঝিয়ে তাঁকে থামানো হয়।

পরে ওই আসামির মায়ের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ছেলের সঙ্গে খাবারসহ দেখা করার জন্য পুলিশ তাঁর কাছ থেকে ৬০০ টাকা নিয়েছে। আর সাংবাদিকেরা দেখে ফেলার জন্য তাঁর কাছ থেকে পরে আরও ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে।

জেলা আদালত পরিদর্শক আবদুস সবুরকে ফোন করে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, তাঁর কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরাটা নষ্ট হয়ে আছে। তিনি তাঁর কার্যালয়ে বসে আর হাজতখানা দেখতে পান না। তিনি বলেন, বাইরে থেকে খাবার দেওয়ার বিধান নেই। আর কোন পুলিশ সদস্য টাকা এ প্রতিনিধিকে সেধেছেন, তাঁকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। শনাক্ত করতে পারলে তিনি জানাবেন।