জঙ্গি অর্থায়নে ৬১ আসামির বিচার শুরু

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’কে অর্থায়ন ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অভিযোগে করা দুই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাকিলা ফারজানাসহ ৬১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আবদুল হালীম শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

শাকিলা বিএনপির সাবেক হুইপ প্রয়াত সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক। জামিনে গিয়ে হাজির না হওয়ায় আজ বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন। তাঁর আইনজীবী আবদুস সাত্তার সময়ের আবেদন করলেও আদালত তা নাকচ করে দেন।

২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীর মাদ্রাসাতুল আবু বকর (র.)-এ অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। পরদিন র‍্যাব-৭-এর সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। এর দুদিন পর বাঁশখালীর লটমণি পাহাড়ে ‘জঙ্গি প্রশিক্ষণকেন্দ্র’ থেকে বিপুল অস্ত্রসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এর প্রায় দেড় মাস পর ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় র‍্যাব-৭-এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাটহাজারী ও লটমণি পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া জঙ্গিরা চট্টগ্রামভিত্তিক নতুন জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের সদস্য।

তদন্তের একপর্যায়ে ওই বছরের ১৮ আগস্ট হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়নের অভিযোগে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শাকিলা ফারজানাসহ তিন আইনজীবীকে। তদন্ত শেষে পরের বছরের মার্চ মাসে র‍্যাব দুই মামলায় শাকিলাসহ ৬১ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়।

দুটি মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, বাহরাইনের নাগরিক আল্লামা লিবদির নির্দেশে দেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে আসামিরা নতুন জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলেন। দেশে তাঁদের বড় ভাই ওরফে জুনাইয়েদ নামের একজন তাঁদের পরিচালনা করতেন। কিন্তু গ্রেপ্তার আসামিরা বড় ভাই সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি। হামজা ব্রিগেডকে সামরিক, দাওয়াহ ও মিডিয়া নামের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। সামরিক বিভাগকে হোয়াইট, ব্লু ও গ্রিন নামে ভাগ করেন। সামরিক বিভাগের প্রধান হলেন মনিরুজ্জামান ওরফে ডন, দাওয়াহ বিভাগের প্রধান নাছির হোসেন, মিডিয়া বিভাগের প্রধান মো. আবদুল্লাহ। জঙ্গিদের কাছে অস্ত্রগুলো বিক্রি করেন অস্ত্র ব্যবসায়ী মোজাহের মিয়া। জঙ্গি অর্থায়নের জন্য মনিরুজ্জামান ওরফে ডনের তিনটি হিসাব নম্বরে আইনজীবী শাকিলা ফারজানা দুই দফায় ২৫ লাখ ও ২৭ লাখ টাকা, হাছানুজ্জামান দুই দফায় ১৫ লাখ ও ১৬ লাখ টাকা, মাহফুজ চৌধুরী ২৫ লাখ জমা করেন।

হাটহাজারী ও বাঁশখালী থানার দুই মামলায় ৬১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন করেন সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি মনোরঞ্জন দাশ। শুনানিতে তিনি আদালতকে বলেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আসামিরা কেউ জঙ্গিদের অর্থায়ন করেছেন। আর কেউ প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রের মজুত করেছেন। র‍্যাবের তদন্তেও বিষয়টি উঠে এসেছে। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে অনেকে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।

আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন ১০ আইনজীবী। শুনানিতে তাঁরা বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা কেউ জঙ্গি নন। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের মতাদর্শী হওয়ায় ষড়যন্ত্র করে তাঁদের এসব মামলায় জড়ানো হয়েছে। শাকিলাসহ তিন আইনজীবী নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপির নেতা–কর্মীদের আইনি সহায়তা দিয়েছেন। এ কারণে তাঁদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। মামলা পরিচালনার জন্য মক্কেলের কাছ থেকে যেকোনো আইনজীবী অর্থ নিতে পারেন। কিন্তু সেটি কোনো জঙ্গির দেওয়া অর্থ নয়।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত বাঁশখালীর মামলায় ৩৩ জন এবং হাটহাজারীর মামলায় ২৮ জনের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে অভিযোগ গঠন করেন। আসামিদের মধে৵ ঘটনার শুরু থেকে পলাতক সাতজন। আজ শুনানিকালে শাকিলা ও নাছির ছাড়া বাকি ব্যক্তিরা হাজির ছিলেন।