'মৃত্যুর আগে রায় কার্যকর দেখতে চাই'

মামুনের ছবি হাতে বাবা মোতালেব মৃধা ও মা মোর্শেদা বেগম।  ছবি: প্রথম আলো
মামুনের ছবি হাতে বাবা মোতালেব মৃধা ও মা মোর্শেদা বেগম। ছবি: প্রথম আলো

‘দীর্ঘদিন ঢাকায় কাজ করেছি। ছেলের কবরের টানে গ্রামে চলে এসেছি। শরীরে নানা রোগে ধরেছে। এখন আর কোনো কাজ করতে পারি না। আমার শেষ ইচ্ছা একটাই, মৃত্যুর আগে যেন ছেলে হত্যার বিচারের রায় কার্যকর দেখে যেতে পারি।’ কথাগুলো পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার আলীপুর গ্রামের মোতালেব মৃধার।

ঢাকায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মোতালেব মৃধার ছেলে মামুন মৃধা নিহত হন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার জনসভায় ওই হামলায় ২২ জন নিহত এবং অন্তত ১০০ জন আহত হন।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান মামুন পড়াশোনা করে মা–বাবার মুখে হাসি ফোটাবেন, এ আশায় ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকার কবি নজরুল কলেজে। ওই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শেখ হাসিনার মঞ্চের খুব কাছেই ছিলেন মামুন। গ্রেনেড হামলায় মাথায়¯স্প্লিন্টার ঢুকে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। স্বজনেরা বিভিন্ন হাসপাতাল খুঁজে অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তাঁর লাশ শনাক্ত করেন। ২৩ আগস্ট গ্রামের বাড়িতে মামুনের লাশ দাফন করা হয়।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে মামুন ছিলেন বড়। ২০০৩ সালে স্থানীয় আলীপুর বি বি রায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে মামুন ভর্তি হন ঢাকায় কবি নজরুল কলেজে। চাচা আলী হোসেনের দোকানে খণ্ডকালীন কাজ করতেন। এ ছাড়া তিনি টিউশনি করে বাড়িতে টাকা পাঠাতেন।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে দশমিনার আলীপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় মামুনের বাবা মোতালেব মৃধা ও মা মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে। তাঁরা সঙ্গে করে নিয়ে যান মামুনের কবরের পাশে। এ সময় তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মামুনের চার বোনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। মা–বাবা বাড়িতে থাকেন। মামুন নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনা তাঁদের ১ লাখ টাকা এবং মেঝ বোন ঝুমুরের বিয়ের সময় দিয়েছিলেন ২৫ হাজার টাকা। সেঝ বোন রুনা ও ছোট বোন তুলিকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে ধারদেনা করে। পরে বড় বোনের স্বামী সোহাগ প্যাদাকে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন শেখ হাসিনা।

মামুনের বাবা মোতালেব মৃধা জানান, ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন। পটুয়াখালী সোনালী ব্যাংক শাখায় জমা রাখা ওই টাকার মুনাফা দিয়ে চলছে তাঁদের সংসার। এ ছাড়া তাঁকেসহ তাঁর চার মেয়েকে প্রধানমন্ত্রী ৩ লাখ টাকা করে দিয়েছেন।

মামুনের মা মোর্শেদা বেগম বলেন, ‘আমার মামুনরে যারা মেরে ফেলল, সেই হত্যাকারীদের কঠোর বিচার চাই। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, এটাই দেখে যেতে চাই। আল্লাহ যেন সে কদিন পর্যন্ত আমাকে বাঁচিয়ে রাখে।’