সেই বিকেলটা ছিল ভয়ংকর

দেড় দশক আগের এই দিনের বিকেলটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ছিল এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। সেদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে মুহুর্মুহু গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণ, রক্তাক্ত মানুষের কাতর কান্না, চোখের সামনে সহযোগীদের মৃত্যু—সব মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ নৃশংসতায় পুরো জাতি স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। আজ সেই ২১ আগস্ট, ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা দিবস।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা হয়। লক্ষ্য ছিল তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত হন। তাঁর শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই হামলায় ঝরে যায় ২২টি তাজা প্রাণ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হয় কয়েক শ মানুষ। যারা এখনো সেই আঘাত নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

আজ এই গ্রেনেড হামলার পঞ্চদশ বার্ষিকী। ২০০৪ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ গ্রেনেড হামলা দিবস হিসেবে দিনটি পালন করে আসছে। এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ঘাতক চক্রের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বহীন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে রুখে দেওয়া এবং দেশে স্বৈরশাসন ও জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তা হতে দেয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, চারদিকে যখন গ্রেনেড বিস্ফোরিত হচ্ছে, তখন দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীরা মানববর্ম সৃষ্টি করে তাঁকে রক্ষা করেন। আল্লাহর অশেষ রহমত ও জনগণের দোয়ায় তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা।  ফাইল ছবি
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। ফাইল ছবি

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ হামলার মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নয়নের ধারাকে স্তব্ধ করে দেওয়া। বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করে হত্যা, ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা; মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা।’

তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা ছিল সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো হত্যাকারীদের রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা করেছিল। এমনকি হামলাকারীদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। অনেক আলামত ধ্বংস করা হয়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করে জনগণকে ধোঁকা দিতে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানোর মতো ঘৃণ্য কাজ করে সরকার।

কর্মসূচি

গ্রেনেড হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আজ বুধবার সকাল নয়টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। বিকেল চারটায় ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গ্রেনেড হামলা দিবসের কর্মসূচি যথাযথভাবে পালন করার জন্য দলের সব স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের অনুরোধ জানিয়েছেন।