শেরপুরে বিদ্যালয়ের মাঠে গরুর হাট

ঝিনাইগাতীর চেঙ্গুরিয়া আনছার আলী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে বসেছে গরুর হাট। সেই হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম। ছবিটি ৭ আগস্টের।  প্রথম আলো
ঝিনাইগাতীর চেঙ্গুরিয়া আনছার আলী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে বসেছে গরুর হাট। সেই হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম। ছবিটি ৭ আগস্টের। প্রথম আলো

১০ বছর যাবৎ শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের চেঙ্গুরিয়া আনছার আলী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে প্রতি বুধবার গরুর হাট বসছে। ফলে এদিন নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যালয় ছুটি দেওয়া হচ্ছে। এতে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশে নষ্ট হচ্ছে।

১৯৭০ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী প্রয়াত আনছার আলীর প্রচেষ্টায় চেঙ্গুরিয়া আনছার আলী উচ্চবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে শেরপুর-ঝিনাইগাতী সড়কের কালীবাড়ি বাজারসংলগ্ন স্থানে ৫৮ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চলমান এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যথাক্রমে ১৪ ও ৬১৫ জন। বিদ্যালয়টির ঠিক সামনে সরকারের ২৫ শতাংশ খাসজমি রয়েছে। এ জমিতে দীর্ঘদিন ধানের বাজার বসত। কিন্তু ২০০৯ সালে ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রশাসন এ জমি ধানের বাজারের পরিবর্তে গরুর হাট হিসেবে ইজারা দেয়। সেই থেকে প্রতি বুধবার এখানে গরুর হাট বসে আসছে। দিন দিন গরুর হাটটি অনেক বড় হয়েছে। শেরপুর জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতা এই হাটে গরু নিয়ে আসেন। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের আগে হাটের দিনগুলোয় এখানে তিল ধারণের জায়গা থাকে না।

এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাটের নির্ধারিত জমিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বর্তমানে গরু বিক্রেতারা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে তাঁদের গরুগুলো দাঁড় করিয়ে রাখেন। ফলে হাটের দিন দুপুরের পর বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়ছে। এ সময় তাদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। প্রতি বুধবার বেলা তিনটা থেকে গরুর হাট শুরু হওয়ায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুইটার দিকে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেয়। বুধবার ছাড়া অন্য দিনগুলোয় সাধারণত বিদ্যালয় ছুটি হয় বিকেল চারটায়। কিন্তু বুধবার হাট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চেঁচামেচি আর গরুর ডাকে বিদ্যালয়ে পাঠদান করা সম্ভব হয় না। বেলা দুইটার দিকে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়। ফলে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত পাঠ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি গরুর হাটের কারণে বিকেলে বিদ্যালয় মাঠে খেলাধুলা করতে পারে না তারা।

৭ আগস্ট বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধান ফটক থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের মূল ভবনের বারান্দা পর্যন্ত গরুর হাট বসেছে। বিক্রির জন্য মাঠজুড়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সহস্রাধিক গরু। এসব গরুর মল–মূত্র ও বর্জ্য বিদ্যালয় মাঠের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থী নেই। বিদ্যালয়ের কার্যালয়সহ সব শ্রেণিকক্ষ তালাবদ্ধ। বিদ্যালয়ের বারান্দাসংলগ্ন স্থানে চেয়ার-টেবিল পেতে ইজারাদারের লোকজন টোল আদায় করছেন।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাসিম, মার্জিয়া আক্তার ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামান্না সিদ্দিকাসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, প্রতি বুধবার বেলা দুইটা থেকে তিনটার মধ্যে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়া হয়। দুইটা বাজলেই ক্রেতা-বিক্রেতারা হাটে জমায়েত হতে শুরু করেন। তখন তাঁদের হইহুল্লোড়ে শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ থাকে না। অনেকে বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে ধূমপান করেন। ফলে তাদের পড়ালেখায় ক্ষতি হয়। বিশেষ করে বুধবার বিকেলে পরীক্ষা থাকলে তাদের চরম দুর্ভোগ ও বিপাকে পড়তে হয়।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজগর আলী গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, গরুর হাট ও বিদ্যালয় মাঠের মধ্যে কোনো সীমানাপ্রাচীর না থাকায় প্রতি বুধবার হাটের দিন বিপুলসংখ্যক গরু বিদ্যালয় মাঠে রেখে বিক্রি করা হয়। হাটের কারণে ওই দিন নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যালয় ছুটি দিতে হয়। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষাসহ পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে গরুর হাটটি অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করবেন বলে জানান।

হাটের ইজারাদার মো. কমল উদ্দিন বলেন, সরকারনির্ধারিত জমিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাঁরা বিদ্যালয় মাঠে গরু রাখছেন। তবে বিদ্যালয়ের পরিবেশের ওপর যাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে জন্য হাটের পরদিন সকালেই পুরো বিদ্যালয় মাঠ পরিষ্কার করে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে ঝিনাইগাতীর ইউএনও রুবেল মাহমুদ বলেন, বিদ্যালয় মাঠ থেকে হাট স্থানান্তরের বিষয়ে কেউ তাঁর কাছে আবেদন করেনি। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে আবেদন পেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।