মেয়র নাছির বললেন ওয়াসার কারণে দুর্ভোগ হচ্ছে

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ফাইল ছবি
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, নগরের অনেক এলাকায় ওয়াসার সংযোগ লাইন নেই। আবার থাকলেও পানি সরবরাহ করতে পারছে না। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রাস্তা কাটছে। এতে নগরবাসীকে নানা রকমের দুর্ভোগ ও হয়রানি পোহাতে হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিটি করপোরেশনের ৪৯তম সাধারণ সভায় মেয়র আ জ ম নাছির এসব কথা বলেন। নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামের (টিআইসি) মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় পানির পাইপ বসানোর জন্য সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করছে ওয়াসা। বছরজুড়ে রাস্তা কাটাকাটির কারণে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। কিছু কিছু জায়গায় একই সড়ক একাধিকবার কাটার অভিযোগ রয়েছে ওয়াসার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে খোদ সংস্থাটির বোর্ড সদস্যরা বিভিন্ন সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের ২ নম্বর গেট এলাকায় উড়ালসড়কের নিচে, জামালখানের মোমিন রোড, নন্দনকাননের বৌদ্ধমন্দির সড়ক পানির পাইপ বসানোর জন্য খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এসব সড়কে প্রচুর ধুলাবালু উড়ছিল। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও পথচারীরা। এ ছাড়া নগরের কলেজ রোডের গণি বেকারি মোড় থেকে জামালখান মোড় পর্যন্ত সড়কটি বন্ধ রয়েছে।

গতকালের সভায় উপস্থিত ছিলেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ। তিনি বলেন, নগরের পুরোনো পাইপলাইন সংস্কার এবং নতুন পাইপলাইন সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সড়কের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ৪১টি ওয়ার্ডের ৬৫০ কিলোমিটার পুরোনো পাইপলাইন সংস্কার করা হবে। ৫০ হাজার নতুন পাইপ বসানো হবে। নভেম্বরে কাজ শুরুর পর আগামী বছরের মার্চে তা শেষ হবে।

এ ব্যাপারে কাউন্সিলরদের কাছ থেকে তালিকা চেয়ে এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, তালিকা অনুযায়ী কাজ হলে আগামী ১০০ বছর পাইপলাইন আর সংস্কার করতে হবে না।

মেয়রের বক্তব্য প্রসঙ্গে গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উন্নয়নকাজ করতে গেলে একটু কষ্ট করতে হবে। আর সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়েই তো রাস্তা কাটা হচ্ছে। পাইপ বসানোর কাজ ২০ বছর আগে করা দরকার ছিল। কিন্তু হয়নি। তারপরও এখন করতে হচ্ছে। আর আগামী দিনে এর সুফল পাওয়া যাবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে রাস্তা কাটার অনুমতিসহ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সহযোগিতার কারণে নগরের উন্নয়নে ওয়াসা কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান এ কে এম ফজলুল্লাহ। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে ওয়াসার পানি সরবরাহ ছিল ১২ কোটি লিটার। এখন তা দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি লিটারে। আগামী বছর থেকে আরও ১৪ কোটি লিটার যুক্ত হবে।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এলাকার পানির সমস্যা তুলে ধরেন প্যানেল মেয়র নিছার উদ্দিন আহমেদ, কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ, কফিল উদ্দিন ও জহুরুল আলম।

গতকালের সভায় উপস্থিত ছিলেন করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম, পুলিশের উপকমিশনার হারুন উর রশিদ হাযারী, মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেম প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী।

শেষ বছরে বেতন বৃদ্ধি

এদিকে মেয়র আ জ ম নাছিরের মেয়াদের শেষ বছরে এসে দৈনিক ভিত্তিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং ডোর টু ডোর কর্মসূচিতে নিয়োজিত কর্মচারীদের ১০ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়। এতে করপোরেশনের ব্যয় বাড়বে ৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

করপোরেশনে ৬ হাজার ৩১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দৈনিক ও নির্ধারিত বেতনে কর্মরত আছেন। মেয়র আ জ ম নাছির দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করেছিলেন।

সভায় মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী গৃহকর আদায় না হওয়ায় পরিষেবা সচল রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গৃহকর দেওয়ার বিষয়ে নগরবাসীকে সচেতন করার জন্য কাউন্সিলরদের আহ্বান জানান তিনি।