জাহালম-কাণ্ড: দুদকের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় নিরীহ পাটকলশ্রমিক জাহালমকে আসামি করায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদকের) ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ বুধবার এক প্রতিবেদন দিয়ে দুদক এই তথ্য জানিয়েছে।

তবে যে ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাঁদের নাম উল্লেখ না করায় দুদকের প্রতিবেদন গ্রহণ করেনি হাইকোর্ট। আগামী বুধবার ওই ১১ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে পূর্ণাঙ্গ তথ্য জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

শুনানির শুরুতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান হলফনামা আকারে দুদকের প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। আদালতকে খুরশীদ আলম খান বলেন, দুদকের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে দুদক। আদালত তখন দুদকের এই আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ‘ওই ১১ কর্মকর্তার নাম কোথায়? কী কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে?’ জবাবে খুরশীদ আলম খান আদালতকে জানান, দুদকের পক্ষ থেকে তাঁকে এই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এখানে কেবল ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সেই বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এই ১১ জনই মামলার তদন্ত করেছিলেন। তখন আদালত বলেন, ‘যাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হলো, কী কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলো, তা আমরা দেখতে চাই।’

জাহালম–কাণ্ডের ঘটনায় দুদকের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করায় আদালত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘উই অ্যাপ্রিশিয়েট ইট। শর্ষের মধ্যে ভূত থাকার দরকার নেই। শর্ষে শর্ষের মধ্যেই থাকুক। নিজে গুড় খাওয়া বন্ধ না করে অন্যকে গুড় খাওয়া বন্ধ করা ঠিক নয়। এতে দুদকের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।’

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতকে জানান, সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় দায়ের করা ৩৩টি মামলার পুনঃতদন্ত হবে। ইতিমধ্যেই ৬টি মামলার পুনঃতদন্ত চলছে। দুদকের আইনজীবীর কাছ থেকে তেমন তথ্য পাওয়ার পর আদালত বলেন, ‘কত দিনের মধ্যে এই মামলার তদন্ত শেষ হবে?’ জবাবে খুরশিদ আলম খান বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই এই মামলার পুনঃতদন্ত কাজ শেষ হবে। আদালত তখন বলেন, ‘পুনঃতদন্ত করা সেটা আপনাদের বিষয়। আমাদের রুলের বিষয়বস্তু এটি নয়। আমাদের রুলের বিষয় ছিল জাহালমকে মুক্ত করার বিষয়। জাহালম মুক্ত হয়েছে। আরেকটি বিষয় জাহালমের ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গ, সেটি আমরা দেখব।’

অপরদিকে ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী আসাদুজ্জামান আদালতকে বলেন, ‘দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। সেই প্রতিবেদনের আলোকে ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

জাহালমকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর বড় ভাই শাহানুর হাইকোর্টে আজ উপস্থিত ছিলেন। গত ৩০ জানুয়ারি প্রথম আলোয় ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ (https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1576452) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সেদিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। শুনানি নিয়ে আদালত জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেন। এরপর হাইকোর্টের আদেশে গত ৩ ফেব্রুয়ারি পাটকলশ্রমিক জাহালোম কারাগার থেকে ছাড়া পান।