দাউদকান্দির ২৮টি বিদ্যালয়ে পরিত্যক্ত ভবনে চলছে পাঠদান

পরিত্যক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে পাঠদান করা হয়। গত সোমবার কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ডাকখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।  ছবি: প্রথম আলো
পরিত্যক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে পাঠদান করা হয়। গত সোমবার কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ডাকখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: প্রথম আলো

পরিত্যক্ত ঘোষণার পরও নতুন ভবন নির্মিত না হওয়ায় কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পরিত্যক্ত ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৪৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে চাঁদগাঁও, বারপাড়া পশ্চিম, খানেবাড়ি, হাসনাবাদ কান্দারগাঁও, নন্দনপুর, জাফরাবাদ, দৌলতপুর, ভবানীপুর, উজিয়ারা, নয়ানগর, আটিপাড়া, হাটখোলা, মোহাম্মদপুর দক্ষিণ, তিনপাড়া, নৈয়ার, চক্রতলা, নোয়াগাঁও, দৈয়াপাড়া, ওলানপাড়া প্রকাশ, খোশকান্দি ও ডাকখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে এবং চশই, মারুকা পূর্ব, কল্যাণপুর, টামটা, চরগোয়ালী, তিনচিটা ও রাঙাশিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় পরিদর্শনে গিয়ে এসব বিদ্যালয় পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও নতুন ভবন নির্মিত না হওয়ায় শিক্ষকেরা ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনেই পাঠদান করছেন। এই অবস্থায় বিদ্যালয়গুলোতে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করার পর লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে।

১৯৩৫ সালে নির্মিত আটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে দুই কক্ষের একটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে একটি কক্ষে শিশুশ্রেণির পাঠদান এবং একটি কক্ষে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকেরা বসে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালান।

 পাশে ১৯৯২ সালে অন্যের জায়গায় নির্মিত তিন কক্ষের একটি পুরাতন টিনের চালায় কয়েকটি শ্রেণির পাঠদান চলছে। বৃষ্টি হলে পানি চুইয়ে শিক্ষার্থীদের বইখাতা ভিজে যায়। এদিকে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিদ্যালয়ে ১২৯ শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দুই শাখায় পাঠদান করা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার বলেন, মে মাসে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম পরিদর্শনে এসে ভবনের অবস্থা দেখে মৌখিকভাবে পুরোনো ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনের পাশে অবস্থিত অন্যের জায়গায় নির্মিত পুরোনো টিনের চালায় পাঠদান চালিয়ে যেতে হচ্ছে। জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য মালিকপক্ষ তাগাদা দিচ্ছে।

এদিকে ১৯৩৯ সালে নির্মিত নৈয়াইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবনটি তিন বছর আগে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরিদর্শনে এসে মৌখিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু শিক্ষকেরা ঝুঁকি নিয়ে এ ভবনেই পাঠদান করছেন। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি দুলাল সর্দার বলেন, ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে মাঝেমধ্যে শিক্ষার্থীরা আহত হচ্ছে। ছাদ চুইয়ে পানি আর সুরকি পড়ে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩৬।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘নতুন ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়মিত তাগাদা দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।’

উপজেলার বারপাড়া পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের দুটি কক্ষ চার বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এই অবস্থায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে বিদ্যালয়ের বারান্দায়। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি ১৯৮৬ সালে নির্মিত বিদ্যালয় ভবনের পূর্ব পাশের দুটি কক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। বাধ্য হয়ে শিক্ষকেরা দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের বারান্দায় পাঠদান করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কয়েক মাস পরপরই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা পাঠাচ্ছি। আশা করছি, বরাদ্দ এলে পর্যায়ক্রমে সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনই নতুন করে নির্মাণ করা হবে।’