অ্যাপে জানা যাবে ইউপি প্রকল্পের অগ্রগতি

ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নকাজ কেমন হচ্ছে, তার অগ্রগতি কতটা, বরাদ্দ কত—এমন নানা বিষয়ে তথ্য জানা যাবে মুঠোফোনে। শুধু তথ্য জানা নয়, উন্নয়নকাজ নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটিও করা যাবে। এমন সুবিধা রেখে ‘এলজিএসপি গো’ নামের একটি অ্যাপ চালু করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

স্থানীয় সরকার সহায়তা প্রকল্প-৩ (এলজিএসপি-৩) এর আওতায় এই অ্যাপটি বানানো হয়েছে। এই প্রকল্পের কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে বানিয়েছেন আরেকটি অ্যাপ ‘আমার ইউপি’। দেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোর (ইউপি) চেয়ারম্যান, সদস্য, সচিব ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের মুঠোফোন নম্বর পাওয়া যাবে ‘আমার ইউপি’ অ্যাপে। বিনা খরচে অ্যাপ থেকে তাঁদের সরাসরি ফোনও করা যাবে।

প্রকল্পের কর্মকর্তা বলছেন, অ্যাপ দুটি তৃণমূল পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। অ্যাপগুলো ইউনিয়ন পরিষদের মতো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে সাহায্য করবে। অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোনের জন্য বানানো ‘এলজিএসপি গো’ অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। ‘আমার ইউপি’ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাবে। গত বৃহস্পতিবার এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের এক মতবিনিময় সভায় ‘আমার ইউপি’ অ্যাপের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

ইউনিয়ন পরিষদের অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়াতে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। দেশের ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৬১টি কর্মপরিকল্পনা (স্কিম) বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, এত বিপুল স্কিমের দেখভাল করা কষ্টসাধ্য। প্রকল্পের অধীনে চলমান স্কিমের তালিকা, বরাদ্দ, বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন জানা যাবে ‘এলজিএসপি গো’ অ্যাপটিতে। প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ জানানো যাবে। অভিযোগ নিষ্পতি হলো কি হলো না তার অগ্রগতিও জানা যাবে এই অ্যাপে। ‘আমার ইউপি’ অ্যাপটির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে ‘এলজিএসপি গো’।

অ্যাপ বানানোর উপদেষ্টা ছিলেন প্রকল্প পরিচালক সরদার সরাফত আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এলজিএসপি-৩ প্রকল্পে আধুনিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ডিজিটাল পরিদর্শনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের ফোন নম্বরের তালিকা জনগণকে নানাভাবে সুবিধা দেবে।

গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪ হাজার ২০০ ইউনিয়ন পরিষদের ৫৮ হাজার ফোন নম্বর অ্যাপে যুক্ত হয়েছে। ৩ হাজার ৮০০–এর বেশি ইউনিয়নের অবস্থানও যুক্ত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ইউপির তথ্য যুক্ত হচ্ছে। অ্যাপে ইউনিয়ন পর্যায়ের বাসিন্দাদের রক্তদাতা তথ্যভান্ডার তৈরির সুযোগ রয়েছে। ইউনিয়নের বাসিন্দারা অ্যাপের মাধ্যমে রক্তদাতা হিসেবে নিজের নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। এ ছাড়া জনপ্রতিনিধি  ও কর্মকর্তাদের মুঠোফোন নম্বরের পাশাপাশি তাঁদের রক্তের গ্রুপও জানা যাবে। 

 ‘আমার ইউপি’ অ্যাপ তৈরির কাজে যুক্ত কর্মকর্তাদের দলনেতা ছিলেন এলজিএসপি-৩–এর সহকারী প্রকল্প পরিচালক মনদীপ ঘরাই। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ইউপি’ অ্যাপটি বানাতে সরকারকে একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি। তিন মাস আগে অ্যাপটি বানানোর কাজ শুরু হয়। প্রতিনিয়ত অ্যাপে নতুন তথ্য যুক্ত হচ্ছে।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার তথ্যসংবলিত অ্যাপও তৈরি হচ্ছে। তবে বিভিন্ন সময়ে সরকারি খরচে তৈরি নানা ধরনের অ্যাপের মান ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এসব অ্যাপ ব্যবহারে সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে সেভাবে প্রচার করা হয় না। ফলে জনগণের সুবিধার্থে অ্যাপ বানানো হলেও এর সুফল পুরোপুরি পাওয়া যায় না।

তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি খরচে বানানো অ্যাপগুলোর বেশির ভাগই বাস্তবসম্মত না। এসব অ্যাপ সম্পর্কে জনগণ জানেও না। ‘আমার ইউপি’র মতো একটি অ্যাপ বানানোর খরচ খুব বেশি না। তবে এর তথ্যগুলো অন্তর্ভুক্ত (এন্ট্রি) করাটা কষ্টসাধ্য। অর্থায়ন যেই করুক, অ্যাপটা কতজন ব্যবহার করছে, কতজন উপকার পাচ্ছে এটাই মুখ্য।