'মন্ত্রপড়া' গুড় খেয়ে অসুস্থ, হাসপাতালে মৃত্যু

বাড়ির মালিকের টাকা খোয়া গেলে সন্দেহ করা হয় জায়গির থাকা ইমামকে। চুরির কথা স্বীকার না করায় পরে তাঁকে কবিরাজের কাছ থেকে আনা ‘মন্ত্রপড়া’ গুড় খাওয়ানো হয়। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ইমাম। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আজ শনিবার ভোরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার সুজানগর উপজেলা সদরের নিয়োগীরবন গ্রামে।

পরিবারের অভিযোগ, মন্ত্রপড়া গুড়ের বিষক্রিয়ায় ইমামের মৃত্যু হয়েছে।

মৃত্যুর কারণ জানতে ইমামের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

মারা যাওয়া ইমামের নাম আবদুর রাজ্জাক (৩২)। তাঁর বাড়ি উপজেলার দুলাই গ্রামে। তিনি নিয়োগীরবন গ্রাম (উত্তরপাড়া) জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন।

ইমামের পরিবার ও সুজানগর থানা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর ধরে আবদুর রাজ্জাক ওই গ্রামের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে জায়গির থেকে মসজিদে ইমামতি করতেন। গত সোমবার মোহাম্মদ আলীর বাড়ি থেকে তাঁর ছেলে মামুন হোসেনের তিন লাখ টাকা খোয়া যায়। মামুন টাকা খুঁজে না পেয়ে সন্দেহ করেন, আবদুর রাজ্জাক চুরি করেছেন। একপর্যায়ে সোমবার দুপুরে মামুন টাকা উদ্ধারের জন্য এক কবিরাজের কাছ থেকে কিছু মন্ত্রপড়া গুড় নিয়ে আসেন। বিকেলে সেই গুড় রাজ্জাককে খাওয়ানো হয়। এরপর থেকেই তিনি মানসিক অস্বস্তিতে ভুগতে থাকেন। গতকাল শুক্রবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর অবস্থার অবনতি হলে সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরপর রাতে ডায়রিয়া শুরু হলে আজ ভোরে তিনি মারা যান।

রাজ্জাকের স্ত্রী সাথী খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী একজন সৎ ও ধার্মিক মানুষ। তিনি কখনো টাকা চুরি করতে পারেন না। তাঁকে চোর সন্দেহে মন্ত্রপড়া গুড় খাওয়ানো হয়েছিল। এতে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সেলিম মোরশেদ বলেন, ‘মানসিক হতাশা থেকে হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আবদুর রাজ্জাক মারা যেতে পারেন। আবার খাদ্যে বিষক্রিয়া থেকেও এমন হতে পারে। আমরা এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য পাইনি।’

এ প্রসঙ্গে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল আলম বলেন, মন্ত্রপড়া গুড়ের বিষক্রিয়ায় ইমামের মৃত্যু হতে পারে। তবে এখনো তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আপাতত থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। নিহত ইমামের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওসি বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানা যাবে। তখন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।