মোজাফফর আহমদের প্রতি অন্তিম শ্রদ্ধা

মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা, ২৪ আগস্ট। ছবি: হাসান রাজা
মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা, ২৪ আগস্ট। ছবি: হাসান রাজা

মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের (কুঁড়েঘর) সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হলো। 

আজ তাঁর কফিনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকায় দুটি জানাজা ও শহীদ মিনারে সবার শ্রদ্ধা জানানোর পর আজ শনিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর মরদেহ। কাল রোববার কুমিল্লার দেবীদ্বারে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে তাঁর।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আজ সকালে অধ্যাপক মোজাফফরের জাতীয় পতাকা মোড়ানো কফিনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তারপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে আরেকটি পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন শেখ হাসিনা। এর আগে শুরুতেই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে কফিনে শ্রদ্ধা জানান তাঁর সহকারী সামরিক সচিব।

মোজাফফর আহমদের কফিনে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মান (গার্ড অব অনার) জানানো হয় এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মোনাজাতে শরিক হন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বেলা ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ন্যাপ সভাপতির প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মরদেহ নেওয়া হয় ধানমন্ডিতে ন্যাপের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখান থেকে সবার শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয় অধ্যাপক মোজাফফরের মরদেহ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, রাজনৈতিক সহকর্মী, অনুসারীদের ফুলে ঢেকে যায় এই রাজনীতিকের কফিন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বায়তুল মোকাররমে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের পাশাপাশি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও শেষ বিদায় জানায় প্রয়াত নেতাকে। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান শ্রদ্ধা জানান শহীদ মিনারে। অধ্যাপক মোজাফফরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শ্রদ্ধা জানিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থনের ক্ষেত্রে অধ্যাপক মোজাফফর অনন্য অবদান রেখেছেন। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ছিলেন একজন জাতীয় নেতা। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সমাজতন্ত্রের জন্য আত্মনিয়োজিত একজন নেতা ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের পক্ষে দ্বিতীয় দফায় ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়ে দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও পূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, অনন্তকাল অনুপ্রেরণা জোগাবেন অধ্যাপক মোজাফফর। শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, মোজাফফর আহমদ জীবনে কোনো সম্মাননার পেছনে ছোটেননি।

পাঁচ দশকের বেশি সময় ন্যাপ সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ শুক্রবার রাত আটটায় রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।