সরকারি নীতির জন্যই কৃষি-মৎস্য খাত স্বয়ংসম্পূর্ণ: কৃষিমন্ত্রী

কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন কৃষি ও মৎস্য খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।’

আজ রোববার সিলেটে তিন দিনব্যাপী ‘টেকসই মৎস্য খাত’ শীর্ষক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। ১৩টি দেশের ৩০ জন বিজ্ঞানী আর ৩৫০ জন গবেষক-শিক্ষকদের অংশগ্রহণে সিলেটে শুরু হয়েছে এ সম্মেলেন। এর উদ্যোক্তা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ। আজ সকাল ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। এ সময় মৎস্য খাতকে আরও টেকসই করার তাগিদ দেন বক্তারা।

সিলেট নগরের বালুচর এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এ সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব স্টার্লিংয়ের অধ্যাপক ও প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ডেভিড সি লিটল। মূল প্রবন্ধকার বক্তৃতায় বিশ্বব্যাপী কৃষি গবেষণায় বাংলাদেশ উৎকৃষ্ট গবেষণার স্থান হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেছেন। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. তরিকুল আলম। সবার শেষে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিই হচ্ছে কৃষি খাত। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য বর্তমান সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে এ ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। দেশের মানুষের পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। উন্নত দেশগুলো এখন বাংলাদেশের সাফল্যের নানা দৃষ্টান্ত তুলে ধরছে, এটি অবশ্যই অহংকারের বিষয়।
কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক সমুদ্র অর্থনীতির (ব্লু ইকোনমি) সম্ভাবনাকে সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বলে বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেন, মাছ চাষের জন্য বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দ্রুতগতিতে মৎস্য খাতে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। কৃষিক্ষেত্রেও বাংলাদেশের রয়েছে অসামান্য অগ্রগতি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. কবির একরামুল হক, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থার (এফএও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডগলাস সিম্পসন এবং ওয়ার্ল্ড ফিশের বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার কান্ট্রি পরিচালক ক্রিস প্রাইস।

উদ্বোধনী পর্ব শেষে তিনটি কক্ষে গবেষকেরা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সম্মেলন মৎস্য খাতকে টেকসই করে তুলতে গবেষণাকে আরও ত্বরান্বিত করবে বলে বক্তারা মন্তব্য করেছেন। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে জলজ চাষ ও পুষ্টি, জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সমুদ্রবিজ্ঞান ও নীল অর্থনীতি, মাছের কৌলিতত্ত্ব, জলজ স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, মাৎস্য কৌশল, পরিকল্পনাসহ নানা বিষয় স্থান পেয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে মাঠপর্যায়ের ভ্রমণের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শেষ হবে।

বিভিন্ন আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, সুষ্ঠু ও টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের মৎস্য খাতকে আরও এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এমনিতেই বর্তমান সরকারের আমলে, বিশেষত গত ১০ বছরে বাংলাদেশ এ খাতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী এ খাতের একটি আদর্শযোগ্য গ্রহণযোগ্যতা অর্জিত হয়েছে। তবে এ খাতকে আরও সমৃদ্ধ করে বাংলাদেশ রপ্তানি খাতে বর্তমানের চেয়েও বেশি আয় বাড়াতে পারে। এ জন্য সরকারের আন্তরিকতা ও উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।