নয়া কর নেই, আয়-ব্যয় সমান

দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য প্রথম বাজেট ঘোষণা করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ৭৮৯ কোটি ৩৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকার বাজেটে আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ সমান ধরা হয়েছে। নগরবাসীর জন্য নতুন করে কোনো করও আরোপ করা হয়নি।

গতকাল রোববার নগরের দরগাগেট এলাকার একটি রেস্তোরাঁর বলরুমে আয়োজিত সুধী সমাবেশে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বাজেট ঘোষণা করেন। বাজেট বক্তৃতায় মেয়র তাঁর ‘আগামীর সিলেট’ যাত্রার প্রথম বাজেট হিসেবে সর্বস্তরের নাগরিকদের সহযোগিতা কামনা করে নগরীর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন।

গত বছরের ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে ‘আগামীর সিলেট’ স্লোগান নিয়ে দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল। এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ জুন প্রথমবার নির্বাচন করে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেবার তাঁর স্লোগান ছিল ‘পরিবর্তন’।

৭৮৯ কোটি ৩৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকার ঘোষিত বাজেটে উল্লেখযোগ্য আয়ের খাতগুলো হলো হোল্ডিং ট্যাক্স ৪৪ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা, স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর কর ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ইমারত নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ কর ২ কোটি টাকা, বিজ্ঞাপনের ওপর কর ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, বিভিন্ন মার্কেটের দোকান গ্রহীতার নাম পরিবর্তনের ফি ও নবায়ন ফি ২৫ লাখ টাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে ১ কোটি ২০ লাখ, পানির সংযোগ লাইনের মাসিক চার্জ বাবদ ৩ কোটি ৮০ লাখ, পানির লাইন সংযোগ ও পুনঃসংযোগ ১ কোটি, নলকূপ স্থাপনের অনুমোদন ও নবায়ন ফি বাবদ ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রভৃতি।

এ ছাড়া সরকারি উন্নয়ন সহায়তা মঞ্জুরি খাতে ২০ কোটি টাকা, সরকারি বিশেষ উন্নয়ন সহায়তা মঞ্জুরি খাতে ১০ কোটি টাকা, অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকা, ১১টি ছড়া সংরক্ষণ ও আরসিসি ওয়াল নির্মাণ প্রকল্পে ৩৪ কোটি টাকা, ভারতীয় অর্থায়নে উন্নত পরিবেশ ও শিক্ষার মান উন্নয়নে ১০ কোটি টাকা, দক্ষিণ সুরমা শেখ হাসিনা শিশুপার্কে রাইড স্থাপন প্রকল্পে ১০ কোটি টাকা, সিটি করপোরেশনের অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট স্থাপন ও বিভিন্ন উন্নয়নকাজে জমি অধিগ্রহণ-ক্রয় খাতে ৫০ কোটি টাকা, দক্ষিণ সুরমায় আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে ৬৫ কোটি টাকা।

রাজস্ব খাতে ৬৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া অবকাঠামো খাতে ৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সাধারণ মঞ্জুরি খাতে ২০ কোটি টাকা, বিশেষ মঞ্জুরি খাতে ১০ কোটি টাকা, অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকা, বিভিন্ন ছড়া খনন ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণে ৫ কোটি টাকা, কুমারপাড়ায় সিটি করপোরেশন মাতৃসদন ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নির্মাণে ১০ কোটি টাকা, লালমাটিয়ায় ডাম্পিং গ্রাউন্ড উন্নয়নে ৬০ কোটি টাকা, পানি শোধনাগারের উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি ও বোতলজাত করে বিক্রি প্রকল্পে ১০ কোটি টাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল্ড নির্মাণ খাতে ৫০ কোটি টাকা, দক্ষিণ সুরমায় আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে ৬৫ কোটি টাকা প্রভৃতি।

সিটি করপোরেশনের কর নির্ধারক চন্দন দাশের সঞ্চালনায় বাজেট ঘোষণাকালে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানসহ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাজেট ঘোষণাকালে গণমাধ্যমকর্মী ছাড়াও নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। বাজেট ঘোষণার পর মেয়র উপস্থিত সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশার লোকজনের প্রশ্নেরও জবাব দেন।

চারটি পদচারী-সেতু হবে : নগরের কোর্ট পয়েন্টে প্রথম পদচারী-সেতু (ফুটওভারব্রিজ) অপসারণ ও নতুন করে আরও পদচারী-সেতু স্থাপন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, প্রথম পদচারী-সেতুটির স্থান নির্ধারণ সঠিক হয়নি। তাই এটি অপসারণ করা হবে। নতুন করে আরও চারটি পদচারী-সেতু স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে।

পরিবহন হবে নারীবান্ধব: এই অর্থবছরে নগরে পরিবহনের নতুন ব্যবস্থাপনা ‘নগর বাস সার্ভিস’ চালুর কথা জানিয়ে মেয়র বলেছেন, নারীবান্ধব যাতায়াতব্যবস্থায় এই বাস সার্ভিসে নারী চালক অন্তর্ভুক্ত করে নারীদের আস্থা অর্জনেও সচেষ্ট থাকবে। নগরীর কদমতলী বাস টার্মিনাল আধুনিকায়নের কাজ চলছে। উন্নত বিশ্বের আদলে তৈরি হতে যাওয়া এই টার্মিনাল আধুনিকায়নের কাজ সম্পন্ন হলে এই এলাকার চেহারা পাল্টে যাবে। 

আরবান হাসপাতাল: সিটি করপোরেশনের নতুন উদ্যোগ ‘আরবান হাসপাতাল’ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘এই নগরীর বস্তিবাসী মানুষ ও হতদরিদ্র মানুষের জন্য নতুন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছি। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে নগর মাতৃসদন ও রোগনির্ণয় কেন্দ্র (ডায়াগনস্টিক সেন্টার) চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এই প্রকল্পে ইতিমধ্যে পূবালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রায় দেড় কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে।’ 

‌জায়গা উদ্ধার: সুরমা নদীর তীর দখলমুক্ত করা নিয়ে মেয়র বলেন, ‘সুরমাপাড়ে সৌন্দর্যবর্ধনে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমও আমরা শুরু করেছি। ইতিমধ্যে নদীতীরের প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গা উদ্ধার হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, কুশিঘাট থেকে কানিশাইল মালনীছড়া পর্যন্ত সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা।’

ভূমিদাতাদের সম্মাননা: উন্নয়নের স্বার্থে স্বেচ্ছায় ভূমি ছাড় দেওয়া নাগরিকদের সম্মাননা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র। সেই সঙ্গে দখলমুক্ত ভূমির পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন বাজেট বক্তৃতায়। 

১৬২ এলাকায় ওয়াই-ফাই: মেয়র বলেন, সিলেটে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট-সুবিধা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ১৬২টি এলাকায় ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন তৈরি করা হচ্ছে। প্রাথমিক অবস্থায় পরীক্ষামূলকভাবে ৬২টি ওয়াই-ফাই জোন করা হচ্ছে। এই উদ্যোগ সফল হলে পর্যায়ক্রমে পুরো নগরীকে ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল।